নানা বিড়ম্বনা; ভালো নেই প্রবাসীরা

আমোদ ডেস্ক।।

inside post

প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংকটের শেষ নেই। বিদেশ বিভুঁইয়ে সেবা নিতে গিয়ে নিজ দেশের দূতাবাসগুলোতেই সেবা বঞ্চনা ও হয়রানিরও শেষ হচ্ছে না। সেবা নিতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়তে হয় অহরহ। করোনা মহামারীর কারণে অনলাইন সেবার ক্ষেত্রে এই দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে আরও বহুগুণ। আর সরাসরি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরনো বঞ্চনা দূর করতেও উদ্যোগ নেই বেশিরভাগ দূতাবাসের। মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোর অসহনীয় রোদের মধ্যে সেবা নিতে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য নেই ন্যূনতম ছাউনির ব্যবস্থা। রোদ বৃষ্টিতে প্রবাসীদের ঠাঁই হয় না দূতাবাসের ভিতরে। নিরাপত্তার অজুহাতে প্রবাসীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারেরও অভিযোগ পাওয়া যায় মাঝে মধ্যেই।

 

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, মহামারীর পর পুরোমাত্রায় সরাসরি সেবা প্রদান শুরু হলে আগের সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। প্রবাসীদের অভিযোগ, কথায় কথায় বলা হয় প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি সচল রাখছে। কিন্তু বাস্তবে প্রবাসীরা কোথাও তেমন মর্যাদাই পান না। কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার পথে ভোগান্তি, সেখানে যতদিন থাকে তখন ভোগান্তি, ফেরার পর ভোগান্তি। তবে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় বেশিরভাগ সময় দূতাবাসে সাহায্যের জন্য গেলে সেখানে পদে পদে ভোগান্তি, অসম্মান ও অবহেলার শিকার হতে হয়। আরব আমিরাত প্রবাসী রিয়াজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দূতাবাসে গেলে বাইরে রোদ বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মাথার ওপর থাকে না কোনো শেড। অন্য দেশের লোকেরা যখন দেখে বাংলাদেশিরা নিজ দেশের দূতাবাসেই সম্মান পায় না, তখন সে দেশের মানুষজনও আমাদের কর্মীদের অসম্মান করে। আমরা যদি নিজের দেশের লোককে মর্যাদা না দেই, তাহলে অন্য দেশও দেবে না। কুয়েত প্রবাসী জানে আলম বলেন, গত বছরের শেষে দিনে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে দূতাবাস ভবনের ভিতরে পানি খেতে গিয়ে এক প্রবাসী যুবকের মারধরের শিকার হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে নানান আলোচনা হয়। কিন্তু নির্যাতন করা ওই কর্মচারী এর আগে বছরজুড়ে প্রতিদিনই সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করলেও সেগুলো ভাইরাল হয়নি, তাই কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। বরং এর আগে প্রবাসীরা যখন অতিষ্ঠ হয়ে কুয়েত দূতাবাসে ভাঙচুর চালিয়েছিল তখন উল্টো প্রবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী সাদ বিন করিম বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্বল্প শিক্ষিত। তাই তারা যখন নিজেদের পাসপোর্ট বা অন্যান্য সেবা নিতে যান তখন তাদের সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলা প্রয়োজন। কিন্তু দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দেখাই পাওয়া যায় না। দেখা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্মকর্তারা ভালো ব্যবহার করেন না।

 

সৌদি আরব প্রবাসী ব্যবসায়ী রাহাত আহমেদ বলেন, দূতাবাসে সাধারণ কর্মীদের সাক্ষাৎ পাওয়াটাই দুষ্কর। আর মিশনের দায়িত্বে থাকা কূটনীতিকরা সাধারণ প্রবাসীদের কাছে রীতিমতো আকাশের চাঁদ। হাতেগোনা জাতীয় কয়েকটি অনুষ্ঠানে শুধু বক্তব্য দেওয়ার সময়ই তাদের দেখতে পাওয়া যায়। তাও আমন্ত্রিত প্রবাসীরাই সেই সুযোগ পায়। শ্রমঘন দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীদের সাধারণ অভিযোগ, দূতাবাসের নিম্নপদস্থ কর্মচারী ও সাধারণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি হয়। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা দিলে সহজেই কাজ হয়, না হলে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। অথচ এসব অভিযোগ দেওয়ার জন্য খুঁজলেও পদস্থ কূটনীতিকদের সঙ্গে দেখা করারই সুযোগ হয় না সাধারণ প্রবাসীদের। মধ্যপ্রাচ্য থেকে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা খালেদা আকতারের অভিযোগ, কাজ করতে গিয়ে প্রতারিত হয়ে ফিরে এসেছি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ তো আমি পাব। সেটা আদায় করে দেওয়ার কথা দূতাবাসের। কিন্তু দূতাবাসের লোকজনের কাছে বারবার ধরনা দিয়ে লাভ হয়নি। তারা একই কথা বারবার বলে, একই কাজ বারবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে করে। ফলে নির্যাতিতাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বাইরে তেমন কোনো উপকার তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ খালেদা আকতারের।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হুঁশিয়ারিতেও অবস্থা পরিবর্তন নেই : ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দূতাবাসগুলোর সেবার বিষয়ে প্রায়শই নানান ধরনের নির্দেশনা ও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও বাস্তব অর্থে অবস্থার পরিবর্তন হয় না। লিখিত আদেশ-নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। গতকালও বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনে উন্নত সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনে সেবাপ্রত্যাশী প্রবাসী বাংলাদেশিদের কেউ যেন সেবা না পেয়ে ফেরত না যান। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দূতাবাসের শ্রম উইংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।

 

শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা বাংলাদেশের সোনার ছেলে। তারা বিদেশে অনেক কষ্ট করেন। বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে তারা যেন ভালো আচরণ পান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে দূতাবাসকেন্দ্রিক কিছু চক্র গড়ে ওঠে। এদের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছরে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েছে। নিজ নিজ দেশ মামলা করে সে দেশের আইন অনুযায়ী দেশে পাঠিয়েছে। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর তারা কারাগারে অন্তরীণ রয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। তবে আমাদের দেশের নাগরিকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কেউ যেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা না বাড়ায়।

 

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন 

আরো পড়ুন