‘নেত্রীর প্রশ্নে আপোস নয়!’

আবু কাউছার অনিক।।

‘প্রিয় শেখ মুজিব, মানুষ বলে তুমি নেই। কিন্তু আমরা অনুভব করি তুমি আজও আমাদের চারপাশে’। শোকের আগষ্ট মাস ভুটানের ‘রাজমাতা’ শেরিং পেম ওয়াংচুকের মন্তব্যটি আমাদের আরো বেশী মনে করিয়ে দেয়। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সমাজতান্ত্রিক কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন- ‘আমি হিমালয় দেখিনি, তবে আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য। আর এভাবেই আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। ‘

এমন হিমালয় তুল্য পিতাকে কি নির্মম ভাবে হারিয়েছি আমরা! আগষ্টের পহেলা তারিখ থেকে শুরু হয় শোকের আয়োজন। নানা আয়োজন, কর্মজযজ্ঞে শেষ হয় মাসটি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই শেষের সাথে আমরাও রেশ হারিয়ে ফেলি। এই হারানোটা ইচ্ছে করেই ঘটে। কারন আমাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেছে, আগষ্ট মাস আসলেই আমরা কেবল জাতির পিতাকে স্মরণ করবো; এমন গাঁট বাঁধা অনিয়মটাকে আমরা নিয়মে পরিণিত করেছি। বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ হয়, তাহলে একটি মাসের বিশেষ কিছু দিন কেন আমরা তাঁকে স্মরণ করবো। তাঁকে স্মরণ করতে হবে প্রতিদিন, ধারণ করতে হবে প্রতিটি কাজে; এই কথাটাকে আমরা মুখে বললেও, হৃদয়ে স্থান দিতে পেরেছেন কতটুকু?

আগষ্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণের নামে আমরা শরমের কাজ করতেও দ্বিধা করি না। শোকের দিনে মিছিলের সাথে পাল্টা মিছিলও করি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক পরিচয়ে। ব্যানারে সামনে থাকতে চলে আমাদের অসুস্থ এক প্রতিযোগীতা। শোকের বেদিতে ফুল দিতে গিয়ে তুলি মুখে হাসি দিয়ে ছবি। কাঙ্গালী ভোজ, ব্যানার, ফেস্টুন আর নিজেকে জাহির করার মিছিলেই কি শেষ হবে শোক আয়োজন? অথচ ব্যাপারটি হওয়ার কথা সম্পূর্ণ উল্টো।

আামদের আরো একটি ব্যাধি আছে। আমাদের মাঝে অনেকেই ভাবেন বঙ্গবন্ধু কেবল আওয়ামীলীগ নেতা। তাঁকে কেবল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগীরা স্মরণ করবে। এই হীনমানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।

 

দুর্ভাগা বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকে চিনতে পারেনি। হাতে নিয়ে হীরের টুকরোটিকে ধ্বংস করেছে। এর অভাব যুগের পর যুগ ভোগ করেছে। হয়তো শত বছরেও তা শেষ হবে না। তবে আমরা আরেকটি হীরের টুকরো পেয়েছি। তিনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন মাদার অব হিউমিনিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঘ যেমন তার গোত্রীয় শাবক জন্ম দেয়, তেমনি বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারায় এসেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এই হীরের টুকরোটি হারালে আমরা হয়ে পড়বো অস্তীত্বহীন।

 

দেশরত্নকে ১৮ বার হত্যার চেস্টা করা হয়েছে। হয়েছে সিরিজ বোমা হামলা। ২১ আগষ্ট ২৪জন আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ হয়েছেন। ক্যারিশম্যাটিক দেশরত্নকে রাজনীতির যুদ্ধে হারাতে অপচেস্টা করেও পারেনি বিএনপি-জামাত। তাদের একটাই লক্ষ্য- নেত্রীকে নিঃশেষ করা। যেমনটা ১৯৭১ এ পাকিস্তানীরা করেছিল। ৭৫ এ করেছিল ঘাতকেরা। ১৯৭১ এ না পারলেও, ৭৫ এ জাতীর জনককে হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়ন হয়েছে। এমন নীল নকশা প্রতিদিন হয় বাংলাদেশে। তাই আমাদের প্রত্যককে সর্তকতার জায়গার পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে। হায়েনাদেরকে রুখতে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশরন্তের প্রশ্নে কোনো আপোস করা চলবে না। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠন; প্রতিটি মুহুর্তের জন্য প্রস্তুত থাকা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আমরা তরুণ প্রজন্ম পঁচাত্তর দেখিনি, তাই জাতির পিতাকে রক্ষা করতে পারিনি। কিন্তু এখনকার তরুণ প্রজন্মকে নেত্রীর প্রশ্নে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। নেত্রীর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে। বিএনপি-জামাতের প্রেতাত্তারা ৭১ ও ৭৫ এ ছিল, এখনো আছে। তাই নেত্রীর প্রশ্নে কোনো আপোস নয়!

লেখক-আবু কাউছার অনিক।।
সাবেক সভাপতি, কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগ।
প্রতিষ্ঠাতা, হ্যালো ছাত্রলীগ।