পরগাছায় ঢাকা পড়ছে কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক লিবার্টি

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
লিবার্টি সিনেমা হল। বর্তমান প্রজন্মের অনেকের নিকট অচেনা। তবে কুমিল্লা নগরীর লিবার্টি মোড় সবাই চিনেন। লিবার্টি সিনেমা হলের নামে এই মোড়ের নামকরণ হয়। পাশের পরিত্যক্ত বাড়িটিই লিবার্টি হল। এটির নির্মাণ সাল নিয়ে নানা মত রয়েছে। তবে ৪০এর দশকের প্রথম দিকে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কুমিল্লার আট দশকের স্মৃতির মিনারটি পরগাছায় ঢেকে গেছে। ঝরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কয়েক দফা বন্ধের পর এটি এরশাদ সরকারের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সচল ছিলো।

inside post


বিভিন্ন সূত্রমতে,লিবার্টি হলের প্রথম নাম ছিলো পিকচার প্যালেস। তার মালিক ছিলেন রামচাঁদ ক্ষেত্রী। ক্ষেত্রী পরিবার ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে ব্যবসা করতে এসে এখানে স্থায়ী হন। স্বাধীনতার সময় তাকে পাকিস্তানিরা হত্যা করে। তার পরিবার ভারতে চলে যায়। হলের ম্যানেজার বাদল চক্রবর্তী স্বাধীনতার পর এটি পুনরায় চালু করেন। ৮০এর দশকের প্রথম দিকে এটি বন্ধ হয়ে যায়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পুনরায় চালু করা হয়।
হলের পাশে গিয়ে দেখা যায়,উত্তর পাশে কাপড়ের হকার মার্কেট। একজন বিক্রেতা জানান, তারা জেলা প্রশাসনকে ভাড়ার মাধ্যমে ব্যবসা করেন। হলের পশ্চিম দিকে প্রবেশ পথ। সেখানে বিভিন্ন চা স্টলের বক্স রাখা হয়েছে। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, টিনের চালা ভেঙে পড়ছে। চালার ছিদ্র দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে। হালকা আলোতেও ভেতরে ভুতুড়ে পরিবেশ। হলের ভেতরের উত্তর পশ্চিম কোনে একটি সমিতির অফিস রয়েছে। বাকি অংশে পরিত্যক্ত আসবাবপত্র ফেলে রাখা হয়েছে।


‘আমার শৈশব, যৌবন ও লিবার্টি সিনেমা হল’ শিরানোমের এক লেখায় লেখক প্রবীর বিকাশ সরকার লিখেছেন,কুমিল্লা শহরে জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যে তিনটি সিমেনা হল আমি দেখেছি তার দুটোই এখন বন্ধ, ভগ্নদশায় পরিণত। এগুলো হলো রূপালী, রূপকথা ও লিবার্টি। রূপালী এখনো ধুঁকে ধুঁকে চলছে।
লিবার্টি হলটি নিয়ে মামলা চলছে অনেক বছর ধরে। শোনা যায় এখানেও বহুতল দালান হবে। কে করবেন জানি না। লিবার্টি ও রূপকথা দুটি হলেরই মালিক ছিলেন ভারত থেকে আগত ক্ষেত্রীরা। তারাও চলে গেছেন স্বাধীনতার পরে। লিবার্টি হলের ম্যানেজার ছিলেন বাদল বাবু, স্বাধীনতার পর তিনি মালিক বলে দাবি করেছিলেন বলে শোনা যায়। এনিয়ে মামলা চলছে।
লেখক ও গবেষক আহসানুল কবীর বলেন,নগরীর প্রাণকেন্দ্র ও ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন হওয়ায় লিবার্টি হলটি জমজমাট ছিলো। দর্শকদের উপচেপড়া ভিড় ছিলো। এটি কুমিল্লার সমৃদ্ধ অতীতের একটি স্মারক। হলটি হয়তো কালের গহবরে হারিয়ে যাবে,তবে লিবার্টি মোড়ের মাধ্যমে এটি বেঁচে থাকবে।
হলের ভূমির বর্তমান মালিকানা সম্পর্কে ফোনে যোগাযোগ করে জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। এদিকে ভূমি অফিসের একটি সূত্র নাম না প্রকাশের শর্তে জানায়, লিবার্টি হলটি কুমিল্লা শহরের মনোহপুর মৌজার বিএস ৬৪২নং খতিয়ানের ০.৩০২৫ একর ভূমির ওপর অবস্থিত। রামচন্দ্র ক্ষেত্রী,পিতা জোয়ালা প্রসন্ন ক্ষেত্রীর নামে এটি খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয়। তবে এর মালিকানা নিয়ে বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।

আরো পড়ুন