পেটের কাটা দাগে শনাক্ত ইকবাল ; মণ্ডপে কোরান রাখার স্বীকারোক্তি

অফিস রিপোর্টার।।

কুমিল্লার নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয় পেটের কাটা দাগ দেখে। কক্সবাজার পুলিশ ভিডিও কলে কুমিল্লা জেলা পুলিশের মাধ্যমে ইকবালকে তার মাকে দেখায়। তার তা মা ইকবালকে শনাক্তের পাশাপশি জানিয়েছেন,তার পেটে কাটা দাগ রয়েছে। পুলিশ পেটের কাটা দাগকেও গুরুত্ব দেয়। এদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মণ্ডপে কোরান রাখার কথা স্বীকার করেছেন আটক ইকবাল হোসেন। শুক্রবার বিকালে তাকে কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন,মণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখার পর হনুমানের মূর্তি থেকে গদা সরিয়ে নেওয়ার কথাও পুলিশকে জানিয়েছেন ইকবাল। তবে কার নির্দেশে এই কাজ করেছেন, তা এখনও জানাননি। গ্রেফতারের পর থেকেই ইকবাল অসংলগ্ন আচরণ করছেন। ৩০ বছর বয়সী ইকবাল কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার নূর আহম্মদ আলমের ছেলে। ইকবালের মায়ের নাম বিবি আমেনা বেগম। তিনি জানান, তার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। ইকবাল সবার বড়। ১৯৯০ সালের ৬ অগাস্ট তার জন্ম।
ইকবালের মা আমেনা বেগম জানান, ইকবাল ১৫ বছর বয়স থেকেই নেশা করা শুরু করে। দশ বছর আগে বিয়ে করে জেলার বরুড়া উপজেলায়। তার এক ছেলের জন্ম হয়। পাঁচ বছর পরে ইকবালের ডিভোর্স হয়। তারপর ইকবাল জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার এলাকার কাদৈর গ্রামে বিয়ে করে। এই সংসারে তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। ইকবালের স্ত্রী সন্তান এখন কাদৈর গ্রামে থাকে।
ইকবালের মা আমেনা বেগম আরো জানান, ইকবাল নেশাগ্রস্থ হয়ে নানানভাবে পরিবারের সদস্যদের উপর অত্যাচার করতো। ইকবাল মাজারে মাজারে থাকতে ভালোবাসতো। বিভিন্ন সময় আখাউড়া মাজারে যেত। কুমিল্লার বিভিন্ন মাজারেও তার যাতায়াত ছিলো। ইকবাল পঞ্চম শ্রেণী পাশ। দশ বছর আগে বন্ধুদের সাথে অন্যপাড়ার আরো কিছু ছেলের সাথে মারামারি হয়। এ সময় ইকবালকে পেটে ছুরিকাঘাত করে। তখন ইকবালের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়।

ইকবালের মা বলেন, তারপর থেকে অপ্রকৃতস্থ ইকবাল। তার চলাফেরার কারণে বিভিন্ন সময় চোরের অপবাদে তাকে স্থানীয়রা মারধর করতো বলেও তিনি আক্ষেপ করেন। ভালো ক্রিকেটও খেলতে পারতো ইকবাল।
তার ছেলে যে অন্যায় করেছে যদি তা সত্য হয় তাহলে যেন তার শাস্তি হয়। তবে ইকবালের মা আমেনা বেগম ও তার ছোট ভাই রায়হান বলেন, ইকবাল কারো প্ররোচনায় এমন কাজ করতে পারে।

১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলের সৈয়দ সোহেল বলেন, গত ১০ বছর ধরে ইকবালকে চেনেন। ইকবাল রংয়ের কাজ করতো। মাঝে মাঝে নির্মাণ কাজের সহযোগী হিসেবেও কাজ করতো। ইকবাল ইয়াবা সেবন করতো। এ নিয়ে ইকবালের বিষয়ে অনেক দেন দরবার করতে হতো। তবে কাউন্সিলর সোহেলের দৃঢ় বিশ্বাস ইকবালের মানসিক অসুস্থতা কাজে লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষ কাজটি করেছে।

কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র মণ্ডপে কোরআন রাখতে ইকবালকে কাজে লাগিয়েছে। নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপটিই ছিল তাদের লক্ষ্য। তবে ইকবাল যখন মসজিদ থেকে কোরআন নিয়ে সেখানে যান, তখন মণ্ডপ পুরোপুরি জনশূন্য হয়নি। এ জন্য তিনি চলে যান মণ্ডপ থেকে কিছুটা দূরের গুপ্ত জগন্নাথ মন্দিরে। ওই মন্দিরটির গেটের তালা ভাঙতে তিনি একটি লাঠিও জোগাড় করেন। তবে সেটি তালা ভাঙার মতো মজবুত না হওয়ায় ব্যর্থ হন ইকবাল। এরপর আবার নানুয়ার দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে যান।

এদিকে কুমিল্লার সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ইকবালকে কে প্ররোচনা দিয়েছে তাকে খুঁজে বের করতে হবে। মূল হোতা বের হলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বাড়বে।

কুমিল্লা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, আমরা প্রথম থেকে দাবি করছি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে। তার সাথে মূল হোতাদেরও খুঁজে বের করতে হবে।