ফারুককে হত্যা পরিকল্পনাকারী বললেন ডা.জহিরের স্ত্রী

 

আবু সুফিয়ান রাসেল।।

কুমিল্লায় রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা ডা. জহিরুল হক মৃত্যুর বিষয়ে সিলভার ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদকে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসাবে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। নিহত ডা. জহিরুল হকের স্ত্রী ফারহানা আফরিন হিমি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে এখানে (সিলভার শাপলা) বসবাস শুরু করি। নিচতলা পার্কিং তাই বিক্রি করতে পারছেন না। আমাদের বলছেন, আপনারা নিচে চলে যান। আমরা রাজি হইনি। দোতলা থেকে আমাদের উচ্ছেদ করতে পারলে ফারুক সাহেব পাপ্পু সাহেবকে পাঁচ লাখ টাকা দিবে। এটা তাদের কন্ট্রাক্ট হইছে। এরপর ফারুক সাহেবের অফিস থেকে আমাকে বারবার হুমকি ধামকি দিয়েছে। ভবনের বিভিন্ন অসংগতি নিয়ে আমরা একটা মামলা করি। সেটা ২০১৮ সালে। আমাদের শর্ত পূরণ না করে উল্টো হয়রানি করেছে। সে মামলার একমাত্র আসামি ছিলেন ফারুক সাহেব। ওনার আপিল কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। তখন তার অফিসের লোকজন বাসায় এসে বলেছে, লাইফ না থাকলে…. লাইফ না থাকলে….. ২০১৮ থেকে এ হত্যার পরিকল্পনা। পাপ্পুকে গ্রেফতার করেছে। নেপথ্যের ফারুক সাহেব এখনও গ্রেফতার হয়নি। ওনাকে আইনের আওতায় আনতে হবে।

(সিলভার ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ)

উনি ইন্দনদাতার আরেকটি প্রমাণ হলো, ফারুক সাহেব বলেছেন, ডাক্তারের চিকিৎসার সকল খরচ তিনি বহন করবেন। তিনি কেনো টাকা দিবেন এটা থেকেও প্রমাণ হয়, তিনি জড়িত। অভিযোগের বিষয়ে গত ২৪ ও ২৫ অক্টোবর বহুবার কল দিয়ে সিলভার ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদকে ফোনে পাওয়া যায়নি। একাধিক ক্ষুদেবার্তারও তিনি জবাব দেননি। এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক বক্তব্যে ফারুক আহমেদ বলেন, সিলভার শাপলা টাওয়ার পাঁচ বছর আগে হস্তান্তর করেছি। শুরু থেকে সালাউদ্দিন মোর্শেদ পাপ্পু সভাপতি ছিলো। গত শনিবার নতুন কমিটি করেছে। নতুন সভাপতি সেলিম, সেক্রেটারি নির্বাচিত হয়েছে কাজল। সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফারহানা হিমি (ডাক্তারের স্ত্রী)। ডাক্তার ছয়টা ফ্ল্যাট নিয়ে দোতলায় থাকেন। আট তলায় পাপ্পুর বাসায় গিয়েছে মিষ্টি বিতরণ করার জন্য। পাপ্পু হিমিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, মিষ্টি বাইরে ফেলে দেয়। পরে ডাক্তার তার লোকজনসহ আট তলায় পাপ্পুর বাসায় যায়। শুনেছি তাদের সাথে দা, রড ছিলো, পাপ্পুর বাসার দরজায় লাথি মারে। সেখানে তর্ক বিতর্ক মারামারি হয়। এ বিষয়ে আমি জানি না। গত তিনদিন আমি চট্টগ্রামে আছি। ডেভোলাপার হিসেবে ডাক্তারের সাথে পাওনা দেনা আছে, সেটা অন্য বিষয়। মান অভিমান আছে। আমি তার জন্য মাদরাসায় দোয়ার আয়োজন করেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক। এ ঘটনার সাথে আমি ১ পারসেন্টও দায়ী নই। চিকিৎসার খরচ প্রদানের বিষয়ে ফারুক বলেন, আমি ম্যানাজারকে বলেছিলাম, যা যা করা দরকার সব করো।

(প্রধান আসামি সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভুইয়া পাপ্পু)

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান জসীম বলেন, দোষীদের শাস্তি চাই। দ্রুত সকল অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য আমরা ধারাবাহিক কর্মসূচি দিচ্ছি। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেবো, কর্মবিরতিতে যাবো কিনা। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আহমেদ সনজুর মোর্শেদ জানান, প্রধান আসামি সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভুইয়া পাপ্পুকে গ্রেপ্তারের পর গত রোববার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, নগরীর রেসকোর্স এলাকায় ফ্ল্যাট মালিকদের দ্বন্দ্বে গত শনিবার দু’ পক্ষের মারামারি হয়। হামলায় আহত চিকিৎসক জহিরুল হক সোমবার মারা গেছেন। রাতে পাঁচজনের নামে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী ফারহানা আফরিন হিমি। আসামিরা হলেন- ওই ভবনের আট তলার বাসিন্দা সালাউদ্দিন মোর্শেদ ভুইয়া পাপ্পু, তার স্ত্রী সুমী, ছেলে আরহাম ও আহনাফ এবং ভবন নির্মাণকারী সিলভার ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ।