বই নিয়ে ক্লাসে —নিড়ানি হাতে মাঠে

 

উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে যত আয়োজন
অফিস রিপোর্টার।।
কৃষি ও খেত খামার। এই শব্দ গুলো শুনে এখনও অনেকে নাক সিঁটকায়। দুই দশক আগে সেটা আরো প্রবল ছিলো। কৃষি নিয়ে লেখাপড়ার কথা বললে অনেকে হাসাহাসি করতেন। জমির কামলা হতে আবার লেখাপড়া! সেই দিন বদলাচ্ছে। এখন কৃষি নিয়ে লেখাপড়া করে মানুষ উদ্যোক্তা হচ্ছেন। স্বাবলম্বী হচ্ছেন। কুমিল্লা অঞ্চলে প্রথম কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজ এই উদ্যোগ নেয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। প্রথমে শিক্ষার্থী পাওয়া ছিলো কষ্টকর। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝাতে হতো। বর্তমানে কুমিল্লা কোটবাড়ি চৌরাস্তা সংলগ্ন ধনপুরে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেছে। তাদের অধিকাংশ উদ্যোক্তা। বাকীরা সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবী।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসে পাঠ গ্রহণের পর শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের মাঠে চাষ করা টমেটো,বাধাঁকপি, স্ট্রবেরি নিড়ানি(লোহার তৈরি সরঞ্জাম) দিয়ে আগাছা মুক্ত করছেন। শিক্ষক ধারণা দিচ্ছেন কোন সবজিতে কত পরিমাণের জৈব সার দিতে হবে। ফসলের কোন অবস্থায় কী ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ল্যাবরেটরিতে করা হচ্ছে নানা পরীক্ষা। পাশের পুকুরে মাছ চাষ ও খামারে গবাদি পশুর রোগ ব্যাধি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থী লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল গ্রামের শফিকুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি স্থানীয় একটি স্নাতকোত্তর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। তিনি বলেন, এখানে এসে যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি তা আমাকে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া গ্রামের মো.এখলাছুর রহমান ২০১০সালে কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বর্তমানে তিনি গবাদি পশু ও মাছের ওষুধ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন,এখানের ডিপ্লোমা কোর্সের বই গুলো অনেক সমৃদ্ধ। বই গুলো পড়লে কেউ বেকার থাকবে না।
কলেজের প্রশিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন,ক্লাসরুমে আমরা বইতে পড়াই। পাশে মাঠে হাতে কলমে সবজি চাষ,মাছ চাষ,গবাদি পশু পালন ও এর রোগ ব্যাধি নিয়ে অবহিত করি।
কলেজ অধ্যক্ষ পরামানন্দ গোস্বামী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। তিনি কৃষির উপর জোর দিয়েছেন। দেশের খাদ্য সংকট দূরীকরণে কৃষির বিকল্প নেই। সাথে এখানে অধ্যয়ন করে বেকার থাকার উদাহরণও নেই বললে চলে।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আখন্দ বলেন, কৃষির প্রতি আমার আজন্ম প্রেম। আমাদের কলেজটি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রথম বেসরকারি উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান। আমরা বেকার নয় উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কাজ করছি। এখানে আন্তরিকভাবে পাঠদান করা হয়। এটিকে গ্রাজুয়েট প্রতিষ্ঠান করার স্বপ্ন রয়েছে।