বর্জ্য ফেলা নিয়ে বিপাকে চান্দিনা পৌরসভা
পৌরসভা এখন ময়লার ভাগাড়,দুর্ভোগে পৌরবাসী
মাসুমুর রহমান মাসুদ, চান্দিনা। ।
কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে ১৪.২ বর্গ কিলোমিটারের এই পৌরসভা। পৌরসভার বর্জ্য এখন কর্তৃপক্ষের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে । আজ মহাসড়কের পাশে, তো কাল আঞ্চলিক সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ করতে থাকা পৌর কর্তৃপক্ষ এখন আবর্জনা ফেলার স্থানই পাচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে পৌর এলাকার ময়লাই পরিস্কার করছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পৌর সদরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ময়লার স্তুপ এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
১৯৯৭ সালে গঠিত চান্দিনা পৌরসভা ‘গ’ শ্রেণী থেকে ‘খ’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়ে প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরেও বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট স্থান গড়ে তুলতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি! দীর্ঘদিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলে এক পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের তোপের মুখে মহাসড়ক থেকে আঞ্চলিক সড়কের পাশে ময়লা ফেলতে শুরু করে। চান্দিনা-বাড়েরা সড়কের ডুমুরিয়া এলাকায় কয়েক বছর ময়লা ফেলে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেখানেও জনরোষে পড়ে পৌর কর্তৃপক্ষ। অবশেষে বাধ্য হয়ে ময়লা ফেলতে শুরু করে পৌর ভবনের সীমানা প্রাচীরের ভিতরের নিজস্ব মাঠে।
কয়েক দিনের ময়লায় পৌরভবনেই যখন প্রবেশ করা দুস্কর, তখন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চান্দিনার কাঠেরপুল এলাকার সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় ময়লা ফেলা শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ সপ্তাহ খানেক আগে সেখানেও হাইওয়ে পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে চান্দিনা পৌরসভা। বর্তমানে পৌর এলাকার ময়লা আবর্জনা উঠানোই বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে পৌর সদর চান্দিনা বাজারসহ আশ-পাশের এলাকায় ময়লা আবর্জনায় একাকার হয়ে পড়েছে। খোদ বাজারের মধ্যেই ময়লার স্তুপ দিন দিন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে করে জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চান্দিনা বাজারের প্রধান সড়কের উপরে স্তুপ করে রাখা ময়লা আবর্জনার পঁচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। বাজারের সকল ময়লা আবর্জনার স্তুপে রয়েছে বাসা-বাড়ি, হোটেল রেস্তোরাসহ হাসপাতালের ময়লা বর্জ্যও। মাছ বাজার ও মাংস বাজারের ময়লার উৎকট দুর্গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সবজি বাজারের আবর্জনার স্তপ পঁচে চরম দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া আবাসিক এলাকাগুলোর প্রতিদিনের ময়লা না তুলে নেয়ার কারণে জনজীবনে চরম ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। এদিকে ময়লার স্তপের পাশে থাকা ভ্রাম্যমান দোকানদাররা রাতের আঁধারে ময়লার স্তুপে আগুন দিচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিও রয়েছে।
পৌরসভার বাগানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা দেবব্রত ভৌমিক জানান, আমাদের বাসায় অন্তত ২১টি পরিবার রয়েছে। আমরা প্রতিদিনের ময়লা আবর্জনা বাসার গেইটে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতাম। সন্ধ্যার পর পৌরসভা থেকে সেগুলো তুলে নিত। কিন্তু আজ এক সপ্তাহ যাবৎ ওই ময়লা না তোলার কারণে এখন বাসায় থাকাই দুস্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা পৌরসভাকে কর দেই। নাগরিকদের সুযোগ সুবিধা দেখার কথা পৌর কর্তৃপক্ষের। এখন যদি তারা দায়সারা ভাব দেখায় তাহলে এই ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।
চান্দিনা বাজারের ব্যবসায়ী এনাম ভূইয়া জানান, চান্দিনা বাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা কাপড় পট্টিতেই আমাদের ব্যবসা। আমাদের ওই পট্টির প্রবেশ দ্বারেই ময়লার স্তুপ। এখানে শুধু বাজারের ময়লা আবর্জনাই না, এলাকার বাসা বাড়ির মাছের আঁশ, মাংসের হাড় সহ সকল ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এখানে ব্যবসা করাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এই ময়লার স্তুপের কারণে মানুষ ওই পট্টিতেই ঢুকতে চাচ্ছে না।
বাজারে আসা ক্রেতা মহারং গ্রামের জাকির হোসেন জানান, পুরো বাজার জুড়েই ময়লা আবর্জনা। আগে সন্ধ্যার পর পৌরসভা থেকে ময়লা আবর্জনা উঠিয়ে নেয়ার পাশাপাশি সন্ধ্যার পর বাজার ঝাড়ু দেয়া হতো। এখন বাজারে ঝাড়ু থাক দূরের কথা, ময়লা তুলতে কোন শ্রমিক বা পৌরসভার ট্রাকই বাজারে আসছে না। এমন পরিস্থিতি দেশের কোন পৌরসভায় আছে কিনা আমার জানা নেই।
চান্দিনা বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ এরশাদ আলী ভূঁইয়া জানান, পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর কতো মেয়র এলো-গেলো কেউ ময়লা ফেলার স্থান নির্ধারণ করতে পারেনি! চান্দিনা বাজারে শুধু পৌরসভার বাসিন্দারাই আসেনা। পুরো উপজেলাসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষের মোকাম চান্দিনা বাজার। এক সপ্তাহেরও বেশি দিন যাবৎ বাজারসহ আশপাশ এলাকার ময়লা না সরানোর কারণে ময়লা আবর্জনায় ভরপুর পুরোবাজার এলাকা। পৌরসভা থেকে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চরম দুর্ভোগে পড়বে জণগণ।
চান্দিনা পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, পৌরসভার কোথাও ময়লা ফেলতে দিচ্ছে না জনগণ। প্রতিদিন অন্তত দুই পিকআপ আবর্জনা পরিস্কার করতে হচ্ছে পৌরসভাকে। কিন্তু একটি ময়লাও আমরা কোথাও ফেলা ফেলতে পারছি না। আগের কোন মেয়রই পৌরসভার আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা কিনতে পারেনি। এমনকি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোন ভূমিকা রাখেনি। যে কারণে বাধ্য হয়ে এখন পৌর সভার ময়লা সরানো যাচ্ছে না।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক নাজিয়া হোসেন জানান, পৌরসভা থেকে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা কিনতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু কোথাও ময়লা ফেলার স্থান কিনতে পারছি না। অপরদিকে যেভাবেই ময়লা ফেলতে যাচ্ছি যেসখাইে বাঁধার মুখে পড়তে হচ্ছে। যে কারণে পৌর এলাকার কোন বর্জ্য সরানো যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করছি। শীঘ্রই যে কোন একটি ব্যবস্থা করা হবে।