বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতার মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় 

 বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল – পরিবারে চলছে মাতম
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নিহতের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আল্টিমেটাম। নিহতের পরিবারে চলছে মাতম। এদিকে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে ১৭ জনের নামোল্লেখে শতাধিক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে মামলা। সবকিছু মিলিয়ে এলাকায় বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা।
ছাত্রদল নেতা নয়নকে কেন, কি কারণে গুলি চালিয়েছে পুলিশ? সেখানে এমন কিই-বা ঘটেছিলো? এসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। বিএনপির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, পুলিশ অতর্কিতভাবে গুলি চালিয়েছে। অপরদিকে পুলিশ বলছে, থানায় ইটপাটকেল ছুঁড়লে আত্মরক্ষায় তারা ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। নয়ন কিভাবে নিহত হয়েছে তার তদন্ত চলছে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে তার মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশ উপলক্ষে শনিবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরের মোল্লাবাড়ি এলাকায় বিএনপি নেতা সাইদুজ্জামান কামালের বাড়িতে প্রস্তুতি সভা করে স্থানীয় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সভা শেষে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে রাস্তায় মহাসমাবেশের লিফলেট বিতরণ শুরু করে। তারা স্থানীয় বাজার এলাকা, উপজেলা পরিষদ ও থানার পাশ দিয়ে পুনরায় মোল্লা বাড়িতে চলে যেতে থাকে। এসময় মিছিলের পেছন থেকে ২/৩ জন নেতাকর্মীদের আটকের খবর পেয়ে মিছিল থামিয়ে বিএনপি নেতা সাইদুজ্জামান কামাল ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন সেখানে যান।
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন জানান, আটককৃতদের ছাড়িয়ে আনতে সেখানে গেলে বাঞ্ছারামপুর থানার ওসি নূরে আলম সিভিল পোশাকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় তিনি বিএনপি নেতা সাইদুজ্জামান কামালকে বিনা অনুমতিতে লিফলেট বিতরণ ও মিছিল করায় আটকের  চেষ্টা চালান। তখন দলীয় অন্যান্য নেতাকর্মীরা তাকে ছাড়িয়ে এনে চলে যাওয়ার সময় পুলিশের কনস্টেবল বিশ্বজিৎ অতর্কিতভাবে ছাত্রদল নেতা নয়নের পেটে গুলি চালিয়ে দেয়।
এদিকে নিহত সোনারামপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নয়নের বাড়িতে চলছে মাতম। ছেলেকে হারিয়ে তার মা-বাবা বারংবার মাটিতে পড়ে বিলাপ করছেন। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে নয়ন ছিল সকলের বড়। নয়নের স্ত্রী এবং একটি শিশুপুত্র রয়েছে। পরিবারের লোকজন কোনভাবেই নয়নের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। ভোর থেকে নয়নের বাড়িতে এলাকাবাসী ও স্বজনসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা ভিড় করছেন। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকার পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিহত নয়নের প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুর উপজেলার সোনরামপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে স্থানীয় করবস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে। সন্তান হারিয়ে বিলাপ করতে থাকা নয়নের মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘আমার পোলারে কই গেলে পামু, পুত মাত্র ভাত খাইয়া ভালা-বুলা গেছে, তারে গুলি কইরা ক্যামনে মাইরা লাইল। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’ নিহত নয়নের স্ত্রী সাজিদা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তানরে বাপছাড়া করছে, এতিম করছে। আমার বুক যে খালি করছে আমি তার বিচার চাই।’
পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নয়ন মিয়া নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। রোববার সকালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে জেলা শহরের শিমরাইল কান্দি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক  টি.এ রোডে ওঠলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে নেতাকর্মীরা সড়কেই বিক্ষোভ সমাবেশ করে। জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফুজায়েল চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপিত হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, সরকার হত্যা, গুম, খুন করে মানুষকে দাবিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। এ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যারা অন্যায়ভাবে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে, এই সরকার তাদের বিচার না করলে বিএনপি সরকার গঠন করলে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। বাঞ্ছারামপুরে শান্তিপূর্ণভাবে লিফলেট বিতরণকালে পুলিশ নির্মমভাবে গুলি করে ছাত্রদলের সোনারামপুর ইউনিয়ন সহ-সভাপতি নয়নকে হত্যা করে। তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। বক্তারা আরো বলেন, মানুষ হত্যা করে আর গাড়ি বন্ধ রেখে বিএনপির কুমিল্লার বিভাগীয় সমাবেশ ঠেকানো যাবে না।
এদিকে পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে বাঞ্ছারামপুর থানার উপ-পরিদর্শক আফজাল হোসেন খান বাদী হয়ে উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলামসহ ১৭ জনকে এজহারনামীয় আসামি করে অজ্ঞাতনামা আরো এক থেকে দেড়শ’ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মো. শাহীন  বলেন, ‘বিনা অনুমতিতে লিফলেট বিতরণের সময় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। নয়ন কিভাবে নিহত হয়েছে তার তদন্ত চলছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে তার মৃত্যুর রহস্য জানা যাবে।’