বাবা আহমেদ আলী ও মায়ের চোখে বঙ্গবন্ধু

আইরীন আহমেদ।।
ছোট বেলা থেকে বঙ্গবন্ধুকে আদর্শ হিসেবে মনে করে এসেছি। যেখানে আমার বাবা ছিলেন তাঁরই সহচর। স্কুল ও কলেজ জীবনে পাঠ্য পুস্তুকে বা কোথাও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তেমন কিছু লেখা দেখা যেত না। তাই তার সম্পর্কে জানাটাও ছিলো প্রায় দুরুহ ব্যাপার। তবে আমরা ছিলাম তার ব্যতিক্রম। আমার বাবা এডভোকেট আহমেদ আলী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহচর, আর সে সুবাদেই বাবার মুখ থেকে ছোট বড় অনেক সত্য ঘটনা জানতে পেরেছিলাম। আমার মাকে বঙ্গবন্ধু বোন ডেকেছিলেন। আমার মা যখন বঙ্গবন্ধু নিয়ে কোন ঘটনার বর্ণনা করতেন তখন তাঁর চোখে দেখতে পেতাম এই বীরের প্রতি শ্রদ্ধা। তাই ছেলেবেলা থেকেই অনুধাবন করেছি বঙ্গবন্ধু মানে একজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। বাঙালির ভালবাসার নাম।
১৯৬৩ সালের ঘটনা। আমার মেজ ভাইয়ের জন্মের পর আম্মার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। রক্তের অভাবে মৃত্যুশায়ী। এ খবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কানে পৌঁছালে তিনি তাৎক্ষণিক রক্তের ব্যবস্থা করে কুমিল্লা পাঠিয়ে দেন। আমার আম্মার রক্তের গ্রুপ ছিলো ও পজিটিভ। এই গ্রুপ বঙ্গবন্ধুরও। তখন কুমিল্লা-ঢাকা বিমান চলাচল সচল ছিলো বিধায় রক্ত পাঠাতে কোন অসুবিধা হয়নি। তখনকার সময় চাইলেই রক্ত পাওয়া যেত না। তাই রক্তের ব্যবস্থা করাটাও ছিলো কষ্টকর। সেদিন আমার মায়ের প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করেছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। এখানে আম্মার প্রতি আন্তরিকতার পরিচয় শুধু দেখাননি, উদারতার পরিচয়ও দিয়েছেন।
তাই সেদিন বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের ১৭ জনকে আততায়ীরা হত্যা করেছিলো, সে সংবাদ পেয়ে আমার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। আশেপাশের লোকজন ভেবেছিলো আমাদের বাসার কেউ মারা গিয়েছে। আমার আব্বার ভাষায় “তোর মা যখন শুনেছে এই কথা তখন ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না। তোর মার কান্না থামানো যাচ্ছিলো না”। বাসা হয়ে পড়েছিলো স্তব্ধ। ১৫ আগস্টের ঘটনায় সারা দেশ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো। চারদিনের দিন আমার আম্মা কুলখানির ব্যবস্থা করেছিলেন। এগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। এই আগস্ট মাসে জাতি হয়েছিলো কলঙ্কিত। প্রয়াত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারে সকল সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। আল্লাহ যেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দান করেন। বাবা মা হারানোর যন্ত্রণা কি যে কষ্টকর যারা হারায় তারাই বুঝে। ভাল থাকুক সব বাবা-মায়েরা । (ছবিতে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট আহমেদ আলীর সাথে লেখক।)
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক:সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ,কুমিল্লা মহানগর শাখা।