বিজয়পুরে মৃৎশিল্প পল্লী গড়ে তোলার দাবি

অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য শত বছরের। বিজয়পুর এলাকার সাতটি গ্রামের পাল সম্প্রদায়ের সাত শতাধিক পরিবার হাড়ি পাতিল তৈরি করতেন। সেখানে বর্তমানে কাজ করছেন ৫০টি পরিবারের মানুষ। তারাও চলছেন খুড়িয়ে খুড়িয়ে। প্রশিক্ষণ পেলে এই ক্ষুদ্র শিল্পীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। দাবি উঠেছে মৃৎশিল্পীদের জন্য মৃৎশিল্প পল্লী গড়ে তোলার।
স্থানীয় সূত্রমতে,সদর দক্ষিণ উপজেলার গাংকুল, তেগুরিয়াপাড়া,দক্ষিণ বিজয়পুর, বারপাড়া, দুর্গাপুর, উত্তর বিজয়পুর ও নোয়াপাড়ার মানুষ মাটির হাড়ি পাতিল তৈরি করতেন। ৬০এর দশকে অ্যালুমিনিয়াম আসায় মাটির পাতিলের চাহিদা কমতে থাকে। এর সাথে মাটি ও কাঠের দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েন শিল্পীরা। এসব কারণে পারিবারিকভাবে কাজ করা মৃৎশিল্পীরা প্রায় হারিয়ে গেছেন।
গাংকুল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,ঘরের আঙিনায় কাজ করছেন নিবারণ চন্দ্র পাল ও তার স্ত্রী দুঃখীনী চন্দ্র পাল। একজন শব্দ তুলে পাতিলের তলার অংশ লাগাচ্ছেন। আরেকজন কাঠে থাকা ডিজাইন পাতিলের গায়ে চাপ দিচ্ছেন। তারা এখানে তৈরি করছেন মুড়ি ভাজার ঝাজুর,তাওয়া,পিঠার খোলা,মাংস রান্নার হাড়ি প্রভৃতি।
নিবারণ চন্দ্র পাল বলেন, তিনি সচেতন হওয়ার পর থেকে ৬০ বছর ধরে কাজ করেন। ২০বছর আগেও গ্রামের বাড়ি বাড়ি উৎসব লেগে থাকতো। পাইকাররা আসতেন দূর থেকে। পাইকারের চাহিদা মেটাতে কাজ করতে করতে দম ফেলার সুযোগ থাকতো না। অ্যালুমিনিয়াম, মেলামাইন আর প্লাস্টিকে মাটির ব্যবসা নষ্ট করেছে। এর সাথে মাটি ও কাঠের দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েন শিল্পীরা। ২০ বছর আগে এক ট্রাক মাটির দাম ছিলো ৩০০টাকা। এখন তা ৬হাজার টাকা।
দুঃখীনী চন্দ্র পাল বলেন, পরিবারের(স্বামী) পায়ের সমস্যা তাই মৃৎশিল্পের কারখানায় কাজ করতে পারেন না। মাটির কাজ করে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে এম এ পাশ করেছে। একটা চাকরি ফেলে তার ভালো হতো। আরেক ছেলে কলেজে পড়ছে। পাতিল পোড়ানোর ব্যবস্থাটি(পইনঘর) আধুনিক করা গেলে তাদের কাজের সুবিধা হতো।
বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি তাপস কুমার পাল বলেন, সাত গ্রামে পাল সম্প্রদায়ের বসবাস। গ্রাম গুলোতে হারিয়ে গেছে সেই উৎসব। মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। তাই পরিবারের অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। মৃৎশিল্পীদের জন্য পল্লী করা গেলে এই পেশাজীবীরা টিকে থাকতে পারতেন।
কুমিল্লা বিসিকের ডিজিএম মুনতাসির মামুন বলেন,বিজয়পুর মৃৎশিল্প কুমিল্লার ঐতিহ্য। শিল্পীদের সমস্যার বিষয় গুলো খোঁজ নিয়ে দেখবো। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবো।
উল্লেখ্য-সেখানে বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে আরো ১২টি কারখানা গড়ে উঠেছে। তবে হারিয়ে যাওয়ার পথে পারিবারিকভাবে কাজ করা মৃৎশিল্পীরা।