বিজয়পুর শ্রমিকের হাটে ছাউনি ও শৌচাগার দাবি
অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা একটি ছোট বাজার। এখানে পাঁচ দশক ধরে ভোর থেকে ‘শ্রম’ বিক্রির হাট বসে। শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষদের অধিকাংশ আসেন ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম. গাইবান্ধা, দিনাজপুর,ময়মনসিংহ, রংপুর ও লালমনিরহাট জেলা থেকে। এখানে একটি ছাউনি ও শৌচাগারের দাবি জানান শ্রমিকরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাত্র পূর্ব আকাশে ভোরের রঙিন আলো ফুটেছে। বাজারের দক্ষিণ পাশে রেল লাইন সংলগ্ন স্থানে অপেক্ষা করছেন শতাধিক শ্রমিক। এখানে শনিবার, সোমবার ও বুধবার হাট বসে। বাজারের দিন ভোরে বেশি শ্রমিক সমাগম হয়। বোরো ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিকের চাহিদা ও দাম বেশি। তখন শ্রমিকের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিনের মজুরি ৮০০টাকা। এখন আমন মৌসুম। কাস্তে আর ভার নিয়ে গৃহস্তের জন্য অপেক্ষা। গৃহস্থ এলে শুরু হয় দরদাম। প্রতিজনের মূল্য এখন ৫০০টাকা। রাতে থাকতে দিতে হয়। দিতে হয় তিন বেলা খাবার। কাজ সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। যাদের শরীরে শক্তি আছে ও তরুণ তাদের চাহিদা বেশি। বেচা বিক্রি চলে সকাল ৮টা পর্যন্ত। অনেকে অবিক্রিত থেকে যান। তাদের জমা টাকা ভেঙ্গে খেতে হয়। বাজারের খুপড়ি ঘর ভাড়া নিয়ে কেউ থাকেন। কেউ মসজিদ,স্কুলের বারান্দা ও গাছতলায় ঘুমান। বাজারের দোকান থেকে খাবার কিনে খান।
রেল লাইনের ওপর বসা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার বাসিন্দা সোলায়মান বাবুল। বয়স ৫০ পেরিয়ে। থাকা ও খাবার গৃহস্তের বাড়িতে। যেদিন কাজ পান না সেদিন পাশের বিজয়পুর স্কুল বা মসজিদের বারান্দায় কাটিয়ে দেন। শ্রমিকদের জন্য এখানে একটি ছাউনি ও শৌচাগারের দাবি জানান তিনি।
কুড়িগ্রামের অলিপুর উপজেলার আমিনুল ইসলাম ও চাঁদপুর হাজীগঞ্জ উপজেলার ডড্ডা গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি, মজুরি তো আর বাড়েনি। বিক্রি না হলে চলা কষ্ট হয়ে যায়। যেখানে সেখানে অবস্থান করায় মোবাইল ফোনসহ এটা সেটা চুরি হয়। ছাউনি থাকলে একটু বিশ্রামের সুযোগ পাওয়া যেতো।
শ্রম বিক্রির হাটের পাশে চা দোকান ওমর ফারুক ভুইয়ার। দোকানের সামনে তিনি বাঁশের ভার,দড়ি ও কাস্তে বিক্রি করেন। তিনি বলেন,এখানে অনেক শ্রমিক চুরি ছিনতাইয়ের স্বীকার হন। কেউ কাজে নিয়ে টাকা দিতে চায় না। এসব বিষয়ে তিনি সহযোগিতার চেষ্টা করেন। অনেকে কাজ করতে এসে ট্রেনে কাটা পড়েন, কেউ বিভিন্ন রোগে মারা যান। তাদের লাশ চাঁদা তুলে বাড়িতে পাঠান।
সদর দক্ষিণ উপজেলার বরল থেকে শ্রমিক কিনতে আসেন অহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন,উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকরা কর্মঠ। তারা মন দিয়ে কাজ করেন। মজুরি একটু বেশি হলেও তাদের নিয়ে যাই।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি সাইফ উদ্দিন পাপ্পু বলেন, বিজয়পুর ও আশপাশের এলাকায় ভালো ধান হয়। সে থেকে এখানে শ্রমিকের চাহিদা সৃষ্টি হয়। বিজয়পুর বাজার থেকে নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লার লালমাই, বরুড়া, লাকসামসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ শ্রমিক নিয়ে যান।
বাজার কমিটির সভাপতি আবদুর রউফ মজুমদার তুহিন বলেন.এই বাজারের বয়স শত বছরের বেশি। শ্রমিকের হাট বসে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে। এই বাজারের বেচা বিক্রিতে শ্রমিকদেরও অবদান রয়েছে।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি অফিসার জোনায়েদ কবির খান বলেন, ঝড় বৃষ্টি হলে বাইরের শ্রমিকের বেশি প্রয়োজন হয়। শ্রমিকদের ছাউনি ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হলে ভালো হয়।
কুমিল্লা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুর রহমান বাবলু বলেন,এখানে আগে শৌচাগার ছিলো। সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। শ্রমিকের হাট পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।