বিদ্যালয় বিজ্ঞানাগারে আগুন, ২৫ শিক্ষার্থী আহত


এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানাগারে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তন্মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসায় ঢাকায় পাঠানোসহ বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে কারও গাফিলতি পেলে শাস্তি দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম।
বুধবার (০৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জেলা শহরের নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় ঘটে এই ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের মধ্যে ছয়জনের নাম জানা গেছে। বোরহান নামের একজনকে ঢাকায় পাঠানো, ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন বিজ্ঞান মেলাকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানাগারে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছিলো। বুধবার দুপুরে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ল্যাবে বিজ্ঞান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সপ্তম শ্রেণির ১০-১২ জন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান মেলার জন্য প্রজেক্ট তৈরি করছিলো। অনুমান সাড়ে ১২ টার দিকে মাল্টিপ্লাগে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ সৃষ্টি হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন নেভানোর জন্য শিক্ষার্থীরা পানি ভেবে দাহ্য পদার্থ ঢেলে দেয়। বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড না হলেও আতঙ্কিত হয়ে তাড়াহুড়ো করে বিজ্ঞানাগার থেকে নিচে নামতে গিয়ে অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ছয়জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন রোহান উদ্দিন (১৫), সাকেরা আক্তার (১৩), ফারিয়া সুলতানা (১৫), তানজিনা আক্তার (১৪), নূহা ইসরাত (১৪) ও ফারিয়া আক্তার (১৪)। এদের মধ্যে রোহানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাকিদের কয়েকজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তিসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার ঢালী জানান, ‘আহতদের মধ্যে কেউ অগ্নিদগ্ধ হয়নি। তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আকাশ জানান, ‘আমরা বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মিলে প্রজেক্ট বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ আগুন লাগলে সবাই আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে। তখনই এই দুর্ঘটনা ঘটে।’
বিদ্যালয়ের গণিত শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিজ্ঞান মেলা সামনে থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। হঠাৎ আগুন লাগায় সবাই ভয়ে দৌড় দেয়। নিচের ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরাও আতঙ্কিত হয়ে বের হতে গিয়ে সিঁড়ির রেলিং ভেঙে গেলে কয়েকজন আহত হয়। পরে শিক্ষকরা দ্রুত আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাহিদুল ইসলাম জানান, ‘ঘটনার পর আমরা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, তা তদন্তের পর বলা যাবে। তবে আহত শিক্ষার্থীরা সবাই শঙ্কামুক্ত।’ এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে কারও গাফিলতি পেলে শাস্তি দেয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মোজাফফর হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘শিক্ষার্থীরা হঠাৎ আগুন দেখে ভয় পেয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে আহত হয়েছে। আপাতত ১৫ জনের মতো শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’