বিশ্বস্ততার শামিয়ানা!

 

আবদুল্লাহ আল মারুফ

মাঠের মাঝ বরাবর টানানো হয়েছে শামিয়ানা। দূর থেকে দেখলে যে কেউ ভেবে নেবে এই শামিয়ানা কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা সামাজিক অনুষ্ঠান উদযাপনের। কিন্তু না। এই শামিয়ানা ভাগ্য বদলের শামিয়ানা। সাধারণ এক যুবককে এই শামিয়ানার নিচেই কনস্টেবলের চাকরির জন্য সাক্ষাতকার দিতে হয়। এর চারপাশে রয়েছে দুইশো মিটার দৌড়ের লেন। তার অদূরেই উচ্চ লাফ ও লম্বা লাফের লেন। চাকরি প্রত্যাশিদের যেকোন শারিরীক অসুস্থতায় সাহায্যের জন্য পুলিশ লাইন্সের গেটে দাঁড়ানো অ্যাম্বুলেন্স। এছাড়াও তাদের পানি সরবরাহের জন্য রয়েছে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। কনস্টেবল চাকরিপ্রার্থীদের এমন ভিন্নভাবেই আপ্যায়ন করছে কুমিল্লা জেলা পুলিশ।

এছাড়াও স্বচ্ছতার জন্য প্রত্যেক পর্যায়ের পরীক্ষার সাথে সাথেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী রাউন্ডে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ লাইন্সে গিয়ে একাধিক চাকরি প্রত্যাশির সাথে কথা হয় এই প্রতিনিধির। তিতাস উপজেলা থেকে আসা একজন বলেন, আমি এর আগের বছরও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। সেবার শামিয়ানা ছিল না। অনেক কষ্ট হয়েছিল রৌদ্রে সেবার দিশাহারা হয়ে গেছিলাম। দৌড়ের সময় পড়ে যাওয়ায় আগেরবার আমি বাদ হয়ে গেছিলাম। এবার শারীরিক সকল পর্যায় শেষ। লিখিতের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি আশাবাদী এবার আমার চাকরিটা হয়ে যাবে।

জেলার বরুড়া উপজেলা থেকে আসা একজন পরীক্ষার্থী বলেন, আগে ভাবতাম মামা কাকা ছাড়া চাকরি হয়না। আমার তো কেউ নেই। সব শারীরিক সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।

জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে চাকরি পরীক্ষা দেয়াতে ভাতিজাকে নিয়ে এসেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আমিও এক সময় কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার হয়নি। এখন নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ মনে হচ্ছে। কারণ সব মাঠেই হয়। তাছাড়া সব কিছুই প্রকাশ্যে হচ্ছে। আমাদের সময় শামিয়ানার কথা চিন্তাও করা যেত না। আমাদেরকে বলা হয়েছিল চাকরি পেতে রোদ্রে পুড়তে হয়।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, সারাদেশের ন্যায় কুমিল্লাতেও চলছে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা। কুমিল্লা জেলা পুলিশ সারা বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম বারের মত চাকরি প্রত্যাশীদের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ দেওয়ার লক্ষ্যে মাঠে শামিয়ানার ব্যবস্থা করেছে। যাতে প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত না হয়ে পড়ে। তারা যেন বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি বজায় রাখতে পারে। তবে তাদের লিখিত পরীক্ষা ইনডোরেই হবে।

তিনি বলেন, বরাবরের মতই নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছ হচ্ছে। এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় কুমিল্লা থেকে ১৫০ জন নেয়া হবে। তার জন্য আবেদন এসেছে ৪ হাজার আটশো জনের। বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করার পর আমরা বিশ্বাস করি আমরা সব চেয়ে যোগ্য প্রার্থীদের কনস্টেবল হিসেবে পাবো।