ডাকাতিয়া নদীর দু’ পাড়ের ভাঙন থেকে রক্ষা করার দাবিতে   মানববন্ধন  

অফিস রিপোর্ট।।
ড্রেজার দিয়ে ডাকাতিয়া নদী খননের নামে মাটি ও বালু বিক্রি করে দু’ পাড়ের ফসলি জমি বাড়ী  ঘর ভাঙন থেকে রক্ষা করার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে কুমিল্লার লাকসাম ও লালমাই উপজেলার ৩ গ্রামের লোকজন। শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে লাকসাম উপজেলার দুপচর, লালমাই উপজেলার শমেসপুর ও পশ্চিম পেরুল গ্রামের লোকজন মানববন্ধন করে। পরে গ্রামবাসী দুপচর বাজারে বিক্ষোভ করে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ডাকাতিয়া নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে ৫টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করে বিক্রি হচ্ছে। নদীর বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর-ডোবা, জলাশয়, ফসলী জমি। এতে নদী তীরবর্তী ঘরবাড়ি, গবাদি পশুর খামার, কৃষি জমিসহ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি বাড়িও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। লাকসাম উপজেলার বাকই ইউনিয়নের দুপচর পূর্বপাড়া, লালমাই উপজেলার শমেসপুর ও পশ্চিম পেরুল গ্রামের দৃশ্য এটি।
 বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ড্রেজারের সামনে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ছাড়াও ড্রেজার মেশিন বন্ধের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে এলাকাবাসীর গণস্বাক্ষরীত আবেদন জমা দিয়েছেন।
দুপচর গ্রামের তৃষ্ণা বড়ুয়া, সচিত্র সিংহ, অমূল্য সিং, তৃষ্ণা বড়ুয়া, লালমাই উপজেলার শমেসপুর গ্রামের মাষ্টার শহিদুল আলম, শাহ আলম, কোরবান আলী, খোরশেদ আলম, মোঃ রায়হান, ইউসুফ আলী, পশ্চিম পেরুল গ্রামের টিটন সাহা, স্বদেশ সাহা, রতন সাহা, সঞ্জয় দত্ত, বিধান সাহাসহ শত শত মানুষ এতে অংশ গ্রহণ করেন।
এলাকাবাসী জানান,  গত দেড় মাস ধরে ঐ গ্রামের কয়েক মিটার ব্যাবধানে ৪টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মোটা পাইপ দিয়ে ৮/১০টি পুকুর, ডোবা, জলাশয় ও ফসলী জমি ভরাট করা হয়। এতে একদিকে নদীর ঐ অংশে বিরাট গর্ত সৃষ্টি হয়ে পাশের বসতবাড়ি, গবাদি পশুর খামার, মহাশ্মশানে যাওয়ার রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে মহাশ্মশানে যাওয়ার রাস্তাসহ নদীর পাড় ভেঙে পড়েছে। ড্রেজিং অব্যাহত থাকলে গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। অন্যদিকে, ড্রেজারের বালু যুক্ত পানি কৃষি জমিতে সয়লাব হয়ে চলতি রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল বিনষ্ট হচ্ছে।
ওই ওয়ার্ডের মেম্বার রফিজ উদ্দিন বলেন, ঐ জায়গা থেকে ৪/৫টি ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে দু’পাড় ভেঙে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। গ্রামবাসীর বাড়ি ঘর ও ফসলী জমি রক্ষা করার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও এলজিআরডি মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বাকই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল জানান, শুনেছি এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প। কে করছে, কত টাকার কাজ কিছুই জানি না।
এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা নির্বাহি অফিসার একেএম সাইফুল আলম জানান, প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের, তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমিও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, স্থানীয় ফারুক চৌধুরী ড্রেজিংয়ের কাজটি করছেন। তবে মাটি ব্যবস্থাপনার কাজ স্থানীয় প্রশাসনের। তাছাড়া একস্থান থেকে একটানা মাটি কাটার কোন নিয়ম নেই। আমাদের ডিজাইন মত মাটি কেটে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। ডিজাইনের বাইরে কাটা হলে বিল পাবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সাইফুল আলম জানান, যত দ্রুত সম্ভব মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।