বীরচন্দ্র গণপাঠাগারে নতুন সদস্য নেওয়া প্রসঙ্গে

 

কুমিল্লা বীরচন্দ্র গণ পাঠাগার (টাউন হল গণপাঠাগার)। ৩২ হাজারের অধিক বই রয়েছে শতবর্ষী এ গ্রন্থাগারে। পাঠাগারের একমাত্র সফটওয়ার নষ্ট প্রায় পাঁচ বছর। নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে না ১৮বছর। পুরাতন পাঠকদের অধিকাংশ নিষ্ক্রিয়। সফটওয়ার ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে নতুন সদস্য নেওয়ার দাবি তরুণদের। এনিয়ে গত সপ্তাহে সাপ্তাহিক আমোদ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়।

সংবাদে উল্লেখ করা হয়, বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর ১৮৮৫ সালে টাউনহলে একটি পাঠাগার স্থাপন করেন। পরে নগর মিলনায়তন তৈরি করে এ স্থাপনার নামকরণ করা হয় বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন।

২০২১ সালের সাধারণ সভার হিসাব মতে, ২৫ হাজার ৪১৮ টি বাংলা ও ৬ হাজার ৮৩২টি ইংরেজি বই রয়েছে এ পাঠাগারের দ্বিতীয় তলায়।
জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে, টাউন হলের নিচতলায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে ৪৪টি জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকী।
পাঠকরা বলেন, টাউন হলে দুর্লভ অনেক বই রয়েছে। আগ্রহী তরুণ প্রজন্ম কুমিল্লার ইতিহাস ঐতিহ্য জানতে এ বইগুলো পড়া দরকার। কেউ আছে সদস্য পদ নিয়ে বসে আছেন, বই পড়েন না। তাই নতুনদের সুযোগ করে দেওয়া দরকার। সরকারি হিসাবে ৪৪টি পত্রিকা, ম্যাগাজিনের কথা থাকলেও কখনো ৪৪টি পত্রিকা, ম্যাগাজিন পত্রিকা কর্নারে দেখিনি। করোনার পর থেকে পত্রিকা রাখা হচ্ছে না।

বীরচন্দ্র গণপাঠাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক মাকসুদ জানান, গত চার বছর সফটওয়ার নষ্ট। হাজার হাজার বইয়ের ভিতর একটা বই খুঁজতে ঘণ্টা চলে যায়। সফটওয়ার ঠিক থাকলে এক মিনিটের কাজ। এতে আমাদের যেমন কষ্ট হয়, পাঠকেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের সাবেক কাউন্সিলর বদরুল হুদা জেনু বলেন, সর্বশেষ কবে সদস্য নেওয়া হয়েছে আমি নিজেও জানি না। তবে এখন সদস্য নেওয়া দরকার। নতুন পাঠকদের সুযোগ করে দেওয়া দরকার। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পত্রিকা কর্নার খুলে দেওয়া যেতে পারে।

গত ১০ বছর ধারাবাহিক ভাবে টাউনহলের সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর। তিনি জানান, ডিজিটালাইজেশন করার লক্ষে ২০১৬ সালে আমরা সকল বইয়ের তথ্য দিয়ে সফটওয়্যার তৈরি করেছি। এক বছর পরে নষ্ট হয়ে গেছে। আর ঠিক করা হয়নি। আমার দশ বছরে নতুন সদস্য নেওয়ার সুযোগ ছিলো না। সর্বশেষ কবে সদস্য নিয়েছে তা আমার মনে নেই। তবে ১৫/১৬ বছর হবে সদস্য নেওয়া হচ্ছে না।

বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার কারণে ২০ মাস বন্ধ ছিলো। মিলনায়তনে সভা, মুক্তিযুদ্ধ কর্নারে সেমিনার না থাকায় টাউন হলের আয় বন্ধ ছিলো। সে সময়ে কর্মচারীদের বেতন চালু ছিলো। এখন ফান্ডে তেমন টাকা নাই, যার কারণে পত্রিকা রাখা যাচ্ছে না। সফটওয়ার তৈরির জন্য বহু টাকা প্রয়োজন। নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে মাসিক সভায় আলোচনা করবো।

জেলা প্রশাসক ও বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের সভাপতি মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, আমি যে টাউন হলের সভাপতি আমি নিজেও জানি না। কুমিল্লায় যোগদানের পর টাউন হলের সাধারণ সভা বা মাসিক সভা কোনটির বিষয়ে আমাকে অবগত করা হয়নি। নতুন সদস্যসহ সার্বিক বিষয়ে জেনে মন্তব্য করবো।

আমরা মনে করি, বীরচন্দ্র গণপাঠাগার দেশের একটি অন্যতম পাঠাগার। এটিকে পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে নতুন সদস্য পদ নেয়া প্রয়োজন। এবিষয়ে পাঠাগারের কমিটি ও প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।