ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় করোনার ঊর্ধ্বগতি : আরো তিনজনের মৃত্যু

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
সীমান্তের জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনেকটা লাফিয়ে বাড়ছে বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংক্রমণ। আক্রান্ত ছাড়িয়েছে সাড়ে চার হাজার। গেলো চব্বিশ ঘন্টায় মারা গেছেন আরো তিনজন। এই নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা উন্নীত হলো ৬৯ জনে। এদিকে সংকমণ রোধে কঠোর লকডাউন কার্যকরে ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করেছে খাঁটিহাতা হাইওয়ে পুলিশ। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছে হাইওয়ে পুলিশ।
সূত্রে প্রকাশ, গত বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ। আর লকডাউনে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ প্রতিপালনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় টহল চালাচ্ছে সেনা বাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অষ্টম দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় করোনার সংক্রমণ রোধে করনীয় বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। জেলার অন্যান্য উপজেলায় ইউএনও, ওসির নেতৃত্বে উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এদিকে সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকসহ ছোট আকারের যানবাহন চলাচল করছে। শহরে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই কম। যেনো এক ধরণের থমথমে অবস্থা বিরাজমান। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। শহরের বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্স, বিপণী বিতান, মার্কেট, প্রধান সড়কগুলোর দোকানপাট অষ্টম দিনের মতো বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন অলিগলিতে দোকানপাট খোলা। কেবল রিকশা ও একেবারেই স্বল্প সংখ্যক সিএনজি চলাচল করলেও ভারি যানবাহন চলাচল করায় কাঁচা বাজারগুলোতেও পড়েছে লকডাউনের প্রভাব। জেলার প্রতিটি উপজেলায় দুইজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালাচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং অহেতুক বাইরে ঘুরাফেরা করায় মানুষকে জরিমানা করাও আছে অব্যাহত। কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে প্রয়োজনে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মহাসড়কের সরাইল কুট্টাপাড়া মোড়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. শাহজালাল আলমসহ সার্জেন্ট মাইদুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের নিয়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তৎপরতা শুরু করে। সার্জেন্ট মাইদুল ইসলাম বলেন, সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে আমরা তৎপর রয়েছি। চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয়, রাস্তায় বের হবার কারণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জরুরী সেবায় নিয়োজিত যানবাহন ছাড়া কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) মো. শাহজালাল আলম বলেন, সরকার ঘোষিত লকডাউন কার্যকর করতে শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। বিশেষ করে সরাইল উপজেলা কুট্টাপাড়া গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। শুধু জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্স পারাপার করা হচ্ছে। কোনও যাত্রী বা অন্য কোনও গাড়ি এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকর করতে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। মহাসড়কে প্রতিটি  গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথে হাইওয়ে পুলিশের টহল চলছে।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। গেল ২৪ ঘন্টায় জেলায় ১০৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। সে সাথে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৬৯ জনে। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে প্রকাশ, গত ২৪ ঘন্টায় জেলা সদর উপজেলায় ২৬ জন, কসবায় ৩১ জন, আশুগঞ্জে ১৭ জন, সরাইলে আটজন, আখাউড়ায় আটজন, নবীনগরে ছয়জন, বাঞ্ছারামপুরে ছয়জন এবং বিজয়নগর উপজেলায় একজন আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনজন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় একজন, সরাইলে একজন এবং নবীনগর উপজেলায় একজন। জেলায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন চার হাজার ৫৫১ জন, এর মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন তিন হাজার ৮২৭ জন।
জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন জানান, ‘জেলার প্রতিটি উপজেলায় দুইজন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবের সমন্বিত একটি টহল দল লকডাউন বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন,২০১৮ ভঙ্গের অপরাধে জরিমানা করা হয়। সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস অব‍্যাহত রয়েছে।জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।’