মহাসড়কে হাত তুলে দিচ্ছেন দৌড় !  

নোংরা পরিবেশ, হকারের দখল, মাদকাসক্তের বিচরণ
এক্সেলেটর স্থাপনের দাবি 

 

মোহাম্মদ শরীফ। 
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে রাস্তা পারাপারে রয়েছে ১৬ টি ফুটওভার ব্রিজ। কুমিল্লার ১০৪ কিলোমিটার মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের এসব ব্রিজে পারাপারে অনীহা সাধারণ মানুষের৷ দ্রুত গতির যানের সামনে হাত তুলে হেঁটে, দৌড়ে কখনো লাফিয়ে পার হোন সাধারণ মানুষ৷ এতে মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। আহতের পাশাপাশি পথচারীদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
ফুটওভার ব্রিজের সুফলের কথা স্বীকার করলেও, আইন মানায় অনীহা, দ্রুত সময়ে পার হওয়ার লোভে মহাসড়কে হাঁটা ধরেন পথচারীরা। নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থীসহ শিশুদের এভাবে মহাসড়ক পার হতে দেখা গেছে। উঁচু ফুটওভার ব্রিজ, ব্রিজের একাংশ ভাঙাচারা, নোংরা পরিবেশ, ভ্রাম্যমাণ হকার, সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে ঢেকে থাকা ব্রিজে মাদকাসক্তের বিচরণের অভিযোগেও অনেকে ফুটওভার ব্রিজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
মাথার উপর ফুটওভার ব্রিজ। স্কুল পড়ুয়া শিশু সামিয়ার হাত ধরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ক্যান্টনম্যান্ট এলাকায় সড়ক পাড়ি দিয়েছেন সানজিদা আক্তার৷ ফুটওভার ব্রিজ থেকেও কেন সন্তানকে নিয়ে মহাসড়ক হেঁটে পার হলেন? এমন প্রশ্নে সানজিদা জানান, মহাসড়কের ফুটওভার ব্রিজ গুলো বেশি উঁচু। উঠতে ও নামতে পায়ে ব্যথা অনুভব হয়৷ রোদের তাপও আছে। দ্রুত পার হতে সড়কে হেঁটে হয়ে পার হয়েছি, যদিও বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়া বাজার ফুটওভার ব্রিজ। মহাসড়কের পাশে সেখানে বসে কাঁচা বাজার। সেখানে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও, সেটিকে ব্যবহার করেন না স্থানীয়রা। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের জন্য রাস্তার মাঝে লোহার ব্যারিকেড দেওয়া হলেও, সেই বাধায় ফুটওভার ব্রিজে মুখ ফেরেনি স্থানীয়দের।
মিয়ার বাজার এলাকার স্কুল শিক্ষিকা মিতা রাণী জানান, সময় বাঁচাতে মানুষ মহাসড়কের মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা না থাকায়, কেউ এটি ব্যবহার করতে চায় না।
তবে কোটবাড়ি মহাসড়ক এলাকার পথচারী মুজিবুর রহমান ভিন্নমত দিয়েছেন। তিনি জানান, যারা বয়স্ক, তারা এত উঁচু ফুটওভার ব্রিজে উঠতে অনেক কষ্ট হয়। এসব ফুটওভার ব্রিজ গুলো এক্সেলেটর সিস্টেম হলে পথচারীদের আগ্রহ বাড়তো। এসব ফুটওভার ব্রিজে মানুষ কষ্ট করে উঠতে চায় না। তাই ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পাড়ি দেন।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ফুটওভার ব্রিজ গুলো মূলত মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়েছে। অনেকেই এই ব্রিজ গুলো ব্যবহার করতে চান না। এটা দুঃখজনক। এর ফলে দুর্ঘটনাও বাড়ছে৷ এগুলো নির্মাণে সরকার অনেক টাকা ব্যয় করেছে। আমরা আশা করবো ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষ আরো সচেতন হবেন।
কুমিল্লা হাইওয়ে রিজিয়নের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম বলেন, হাইওয়ে গুলোতে গাড়ি দ্রুত গতিতে চলে৷ এজন্য ফুটওভার ব্রিজ দেওয়া হয়েছে সড়ক পারাপারে৷ কিন্তু পথচারীরা হাত তুলে দ্রুত গতির গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড় দেন। এতে অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে৷ আমরা এসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার পুলিশের তৎপরতা পাশাপাশি স্থানীয় এলাকা গুলোতে সচেতনতা মূলক কর্মসূচি গ্রহণ করবো। আশা করছি এতে সুফল পাবো।