মা কবরে বাবা কারাগারে, সৎ মায়ের নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্যহীন তিথি

 

আমোদ রিপোর্টার।।

তার মা কবরে,বাবা কারাগারে। এদিকে সৎ মায়ের খুন্তির ছ্যাঁকা আর নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন তিথি (১৫) নামের এক কিশোরী। সে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জামাল হোসেনের মেয়ে। ইসরাত জাহান তিথি সারা গায়ে ক্ষত নিয়ে এখন চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এদিকে গা ঢাকা দিয়েছেন সৎ মা মাহমুদা সুলতানা লাভলী। তিনি দেবিদ্বার উপজেলার প্রেমু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। এ ঘটনায় তিথির খালু সামছুল হক ভ‚ইয়া বাদী হয়ে চান্দিনা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- দেবিদ্বার উপজেলার বরকমতা গ্রামের বিরাম বাড়ির আরব আলীর ছেলে জামাল হোসেন (৪৫) ১৯৯৬ সালে দেবিদ্বার উপজেলার জাফরাবাদ (সীমারগুড়ি) গ্রামের আমেনা খাতুন তিন্নিকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তিথি ও আবু মুছা নামে দুই সন্তান জন্ম নেওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম স্ত্রী তিন্নি মারা যায়। মা মারা যাওয়ার পর তিথি ও মুছা বাড়িতে চাচির কাছে বড় হতে শুরু করে। এদিকে জামাল হোসেন ২০১৭ সালে স্কুল শিক্ষিকা লাভলীকে বিয়ে করে চান্দিনায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি পিতা জামাল হোসেন একটি মামলায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে থাকায় তিন্নি ও মুছা সৎ মায়ের সাথেই বসবাস করছিল। পিতার অবর্তমানে তুচ্ছ বিষয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে সৎ মা লাভলী। কথায় কথায় মারধর, দেয়ালের সাথে ধাক্কা, খুন্তির ছ্যাঁকাসহ নানা শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চলে তার উপর। চলতি মাসের ১ তারিখ কাজ করতে না পারার অজুহাতে তিথিকে বেধরক পিটিয়ে গায়ে খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়। এতে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে দেবিদ্বার উপজেলার বাগমারা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া তিথি।

গত ২ অক্টোবর খালু সামছুল হক ভ‚ইয়া এসে চান্দিনার ভাড়া বাসা থেকে তিথিকে নিয়ে যান ময়নামতি সেনা নিবাস সংলগ্ন ঘোষনগর উদয়নবাগ এলাকার নিজ বাসায়। সেখানে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান খালু সামছুল হক। কিন্তু তখনও তিনি জানতেন না তিথির সারা শরীরে ক্ষত! মানসিক ভারসাম্যহীন থাকায় তিথিও কিছু বলতে পারছিল না। গত ১২ অক্টোবর তিথি বাথরুমে গোসল করার সময় খালাতো বোনের চোখে পড়ে তার সারা শরীরের ক্ষতের চিহ্ন। ওই বিষয়ে স্থানীয় কোন এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিথির সারা শরীরের ক্ষতের ছবি আপলোড করলে গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে। সোমবার রাতে গণমাধ্যম কর্মীরা খোঁজ নিয়ে ময়নামতি ঘোষনগর খালুর বাসা থেকে তিথির সাথে কথা বলে চান্দিনার বাসায় আসে।
তিথির চাচি বরকামতা জাগরনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রওশন আরা আক্তার জানান- তিথি ছোট বেলা থেকে খুব মেধাবী ছাত্রী ছিল। পড়াখেলার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও বেশ পারদর্শী ছিল। একাধিকবার উপজেলা পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়। আমার কাছে থাকা অবস্থায়ও সে সুস্থ ছিল। কিন্তু গত ৮-৯ মাসের নির্যাতনে সে সম্পূর্ণ মানসিন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সৎ মা মাহমুদা সুলতানা লাভলী পলাতক থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

চান্দিনা থানার ওসি শামসউদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান- আহত তিথিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় শিশু নির্যাতন দমন আইনে চান্দিনা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিথির সৎ মা-কে গ্রেপ্তার করতে তাদের চান্দিনার বাসায় অভিযান চালালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সে পালিয়ে যায়। আসামি গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।