যেভাবে পথচলা শুরু কুমিল্লার আদালতের প্রথম নারী আইনজীবীর
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
সামছুন নাহার বেগম। কুমিল্লার আদালতের প্রথম নারী আইনজীবী। ৪৬বছর আগে তিনি এই পথচলা শুরু করেন। তবে এখনকার মতো সে সময়টা এতোটা নারীবান্ধব ছিলো না। বাবা ছিলেন আইনজীবী ছৈয়দুর রহমান। মা ছালেহা বেগম। তাদের উৎসাহে তিনি আইন পেশায় আসেন। অনেকে পুরুষের পেশা বলে তাকে হেয় করতে চাইতেন, তবে তিনি পাত্তা দেননি। পরবর্তী স্বামী আনোয়ারুল কাদের বাকীর উৎসাহে এগিয়ে যান। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ওভারামপুর গ্রামে। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ২য়। বড় ভাই ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ রশিদুল হাছান পাটোয়ারী।
সামছুন নাহার বেগম বলেন, গ্রামে তার জন্ম। বেড়ে উঠা শহরে। মালেকা মমতাজ ও কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে পড়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চেয়েছেন। যাতায়াতের অসুবিধা দেখে বাবা বললেন-কুমিল্লা আইন কলেজে ভর্তি হতে। তার ব্যাচে নারী শিক্ষার্থী তেমন ছিলো না। তার সমসাময়িক শিখা ও শিপ্রা নামের দুইজন ছাত্রীর নাম মনে আছে। ১৯৭৮সালে কুমিল্লা আদালতে আসেন। তখন নারী ও শিশু কোর্টের বর্তমান লাল বিল্ডিংটা ছিলো। আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরি ছিলো একতলা ভবনে। এতো মানুষ,দোকানপাট কিছু ছিলো না। আদালতের পাশের রাস্তায় মাইক বাজানো হতো না। ১৯৮২সালে সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ আনোয়ারুল কদের বাকীর সাথে বিয়ে হয়। তিনি জননিরাপত্তা ট্রাইবুন্যাল ও চোরাচালান ট্রাইব্যুনালের পিপি ছিলেন। তাদের এক ছেলে দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ফারহানা শারমিন লন্ডনে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত। ছেলে ব্যারিস্টার সাজ্জাদ কাদের, হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। ছোট মেয়ে ব্যারিস্টার ফারিয়া তাহসিন,তিনি লন্ডনে প্র্যাকটিস করেন।
তিনি বলেন, বাবা হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন। কিভাবে মামলার ড্রাফট করবো। কিভাবে আদালতে মামলা উপস্থাপন করবো। যারা প্রথম দিকে নাক কুঁচকে তাকাতেন,তারাই পরে নিজেদের স্ত্রী,বোন ও মেয়েকে আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
প্রথমদিকের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তখন জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন মোরশেদ সাহেব। আমাকে আদালতে মামলা লড়তে দেখে তিনি উৎসাহ দেন। অনেকে আদালতে আমাকে দেখতে আসতেন।
নারীদের আইন পেশায় আসা নিয়ে তিনি বলেন, আমার ৫বছর পরে কুমিল্লার আদালতে নারী আইনজীবী আসেন। বর্তমানে দুই শতাধিক নারী আইনজীবী রয়েছেন। পেশার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। ¯্রােতে গা ভাসানো যাবে না।
নিজের তৃপ্তির বিষয়ে বলেন, এই পেশায় মানুষের উপকারের সুযোগ রয়েছে। নিজের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সেটা পালনের চেষ্টা করি।
স্বামী আনোয়ারুল কদের বাকী বলেন, প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। স্ত্রীর মাধ্যমে নারী মুক্তির চেষ্টা করেছি। তখন সামছুন নাহারকে আদালতে পাঠাতে অনেক পারিপাশি^ক পরিস্থিতি মেনে নিতে হয়েছে। তার উৎসাহ ও শ্রমকে আমি সাধুবাদ জানাই।
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সামছুন নাহার বেগম কুমিল্লা আদালতের সিনিয়র ও প্রথম নারী আইনজীবী। তিনি বিনয়ী ও জ্ঞানী মানুষ। তার আদর্শ নতুন আইনজীবীদের জন্য অনুপ্রেরণার হতে পারে।