যেভাবে উন্নতি হতে পারে কুমিল্লা নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি

কুমিল্লা নগরীতে দিন দিন বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও খুনের মতো অপরাহ। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পালায়নের পর আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। যার রেশ এখনও কাটেনি। আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারীরা অপরাধ সংগঠনের পর বিভিন্ন দলের লেবাস ধারণ করছেন। অনেকে অপরাধ করে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ে অপরাধের তালিকাও দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কি কি করা প্রয়োজন তা জানিয়েন কুমিল্লার বিশিষ্টজনেরা। তাদের বক্তব্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সাপ্তাহিক আমোদ‘র অফিস রিপোর্টার আবদুল্লাহ আল মারুফ।

inside post

দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা প্রয়োজন
কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ মো. হুমায়ূন কবীর মাসউদ বলেন, এই ধ্বংসাত্মক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। আর এই অবস্থা কখনোই ঠিক হবেনা যদি দায়িত্বে নিয়োজিত যারা আছেন তারা মন মগজে নিজেদের না বদলান।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠা কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী তারা দলের জার্সি পরিবর্তন করেছে মাত্র। কিন্তু জার্সির ভেতরে থাকা পশুত্ত্ব, বর্বরতা আগেরটাই রয়েছে। অর্থাৎ উপরের ক্যাচিং চেইঞ্জ কিন্তু সফটওয়্যার আগেরটাই।
মূলত, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায়ীদের কোন নির্দিষ্ট দল নেই। তারা সুযোগসন্ধানী মাত্র। অনতিবিলম্বে প্রশাসন দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা না রাখলে দেশ, জাতি সবার জন্যই হুমকি।

দ্রুত পুলিশকে সক্রিয় করতে হবে
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী চৌধুরী বলেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও তারাতো পুলিশকে সহযোগিতা করছে। আমার মনে হয় যদি পুলিশ সক্রিয় না হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকানো সম্ভব হবে না। এজন্য দ্রুতই পুলিশকে সক্রিয় করা প্রয়োজন।
এসময় তিনি বলেন, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করায় মানসিকভাবে তারা ভেঙে পড়েছে। তাদের মানসিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। মাঠে সক্রিয় করে তুলতে হবে। আর না হয় সমস্যা সমস্যাই থেকে যাবে। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, যেমন জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
এসময় তিনি আরও বলেন, শুধু প্রশাসন নয়, ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন হতে হবে। যেমন সমাজ, রাষ্ট্র ও পারিবারিক সচেতনতা দরকার। এতে করে রুট লেভেল থেকে সংস্কার করতে হবে। আর অপরাধ প্রবণতাও কমে যাবে।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে ক্যাম্পেইন প্রয়োজন
মাযহারী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন মাযহারী বলেন, চুরি ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা রোধের জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। অপরাধ প্রবণতা রোধের প্রথম ধাপ হলো শিক্ষা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে অপরাধের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। এতে করে মানুষ অপরাধের কুফল বুঝবে এবং আইন মেনে চলার মনোভাব গড়ে উঠবে। স্কুল, কলেজ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধবিরোধী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে, যাতে তরুণ প্রজন্ম অপরাধের প্রতি সচেতন থাকে। সামাজিক সচেতনতা ক্যাম্পেইন চালানো, যেখানে বিভিন্ন মিডিয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ রোধ সম্পর্কে প্রচার করা হয়। পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম জোরদার করা উচিত। সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্তকরণ এবং গ্রেফতার প্রক্রিয়া সহজ করা যেতে পারে। গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, বিশেষ করে অপরাধমূলক কর্মকা-ের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য গোয়েন্দা বিভাগের কার্যক্রম শক্তিশালী করা।

পেশাগত অপরাধী গোষ্ঠীর তৎপরতা
ফেনী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সুমাইয়া বিনতে হোসাইনী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কুমিল্লাসহ সারাদেশে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জুলাই আন্দোলনের সময় বিতর্কিত অবস্থানের জন্য নৈতিক ও মনোবল সংকটের কারণে বর্তমান সময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে একদিকে যেমন পেশাগত অপরাধী গোষ্ঠীর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তেমনি দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও রাজনৈতিক আক্রোশও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
অভ্যন্তরীণ সংকট কাটিয়ে উঠে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের কাজের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারলে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করি।

 

আরো পড়ুন