রবিউল আউয়াল মাসের আগমন ও অতুলনীয় গুরুত্ব 

 

inside post

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

গত বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শুরু হয়ে গেছে মাহে রবিউল আউয়াল। আহলান সাহলান- মাহে রবিউল আউয়াল। মাহে রবিউল আউয়ালের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অন্যান্য গুরুত্ব ও তাৎপর্য থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ছরকারে দু আলম দু জাহানের বাদশাহ সাইয়্যেদুল মুরসালিন হাবীবে খোদা হযরত মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমন এই মাসে। যিনি শেষ নবী, যার শুভাগমনে ধন্য সমগ্র জগৎ, আলোকিত মক্কার মরুপ্রান্তর, যার কারণে চিরভাস্বর মদিনাতুল মুনাওয়ারাহ।

স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন, সমগ্র জগৎবাসীর জন্য আপনাকে রহমত করেই প্রেরণ করেছি। ওই আয়াত প্রমাণ করছে রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। আরও ইঙ্গিত বহন করছে আল্লাহ জগৎসমূহের রব এবং তার প্রিয়বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন এ জগৎসমূহের রহমত। আল্লাহর রুবুবিয়্যাত তথা মালিকানা যে পর্যন্ত বিস্তৃত,  হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নবুয়ত সে পর্যন্ত ব্যাপৃত।

মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন যে বরকতপূর্ণ ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত রবিউল আউয়ালে সংঘটিত সঙ্গত কারণেই সে মাসটি উম্মতে মোহাম্মদী তথা জগতবাসীর কাছে সম্মানিত, তাৎপর্যমন্ডিত ও মহিমান্বিত এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি বছরের মাস সমূহের মধ্যে রবিউল আউয়াল মাসের শ্রেষ্ঠত্ব, গুরুত্ব ও মহত্ত্ব সবচেয়ে বেশি ও অতুলনীয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র রমজান ওই সম্মানিত মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে। কোরআন নাজিলের মাস নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ, সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ। আরও ইরশাদ হয়েছে- কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। রসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ঐতিহাসিক ও গোটা বিশ্ববাসীকে অবাক করে দেওয়া এবং আধুনিক যুগের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানীদের হার মানিয়ে দেওয়া এমনকি চাঁদের দেশ ও মঙ্গল গ্রহের রকেট যাত্রীদের চিরপরাস্তকারী ও নতিস্বীকারে বাধ্যকারী মিরাজের ঘটনা, আরশে আজিমে আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের ঘটনা যা কোরআনে কারিমে আল্লাহ এভাবে উল্লেখ করেছেন।

অন্য আয়াতে- পবিত্রতা আল্লাহর যিনি তার বান্দা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে রাতের কিয়দাংশ মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন। অনন্তর দুই ধনুক অপেক্ষাও কম ব্যবধান রইল। অতঃপর আল্লাহ তার প্রিয় বন্ধু (মুহাম্মদ সা.) কাছে প্রত্যাদেশ করলেন। এবারে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হলো, কোরআনে কারিমে উল্লিখিত এসব আশ্চর্যান্বিত, তাৎপর্য-মন্ডিত, সম্মানিত মাস, রজনী, দিবস, ক্ষণ, ঘটনাবলি এর অর্জন ও প্রাপ্তিতে উম্মতে মুহাম্মদী তথা জগৎবাসী সম্মানিত ও সৌভাগ্যবান হয়েছে একমাত্র  হযরত মুহাম্মাদ (সা.)  এর কারণে ও মাধ্যমে। আর নবীকূল শিরোমণির শুভাগমন হয়েছে মাহে রবিউল আউয়ালে। তাই তো এ মাসটির ফজিলত, গুরুত্ব ও মহত্ত্ব অধিক ও অপরিসীম হওয়াই ইমানের দাবি।

এই রবিউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে আরও বহু ঐতিহাসিক, গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে, যা মাহে রবিউল আউয়ালের মর্যাদা ও গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয় এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে-
মহান আল্লাহ পাক নিজে বলেছেন হে আমার হাবিব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি আপনাকে যদি সৃষ্টি না করতাম , তাহলে এই পৃথিবী সৃষ্টি করতাম না।

মা খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-এর সঙ্গে রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর পরিণয় হয়েছিল ১০ রবিউল আউয়াল। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের উদ্দেশে রওনা করেছিলেন ১ রবিউল আউয়াল। তিনি মদিনায় পৌঁছেন ১২ রবিউল আউয়াল।

প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে কুবা নির্মাণ করেন ১৬ রবিউল আউয়াল।
মাহে রবিউল আউয়ালের আগমন ঘটে নবী প্রেমের প্রতীক ও নিদর্শন হিসেবে। যার হৃদয়ে নবীপ্রেম ও নবীর ভালোবাসা থাকবে, রবিউল আউয়াল তার অন্তকরণে আবেগ, উচ্ছাস আর স্পন্দন সৃষ্টি করবে। উৎসাহিত আর প্রত্যয়ী করবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এর আদর্শ ও সুন্নাতের প্রতি। আল্লাহই তো ঘোষণা করেছেন নিশ্চয়ই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত ইমানদার হবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার পিতা-মাতা, সন্তান এবং অন্যান্য মানবকূলের চেয়ে।

অতএব, আমাদের উচিত হবে রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আগমনের এই মাসকে কেন্দ্র করে  বেশি বেশি  নামাজ আদায়, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, দরুদ শরীফ ও মিলাদ শরীফ পড়ে তার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার মহান আদর্শ ও সুন্নতকে আঁকড়িয়ে ধরে ইহকালীন ও পরকালীন অগ্রগতি ও মুক্তিলাভে সাফল্যমন্ডিত হওয়া। মাহে রবিউল আউয়াল মাসের বরকত, রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মহব্বত ও পরকালীন নাজাতের উসিলা করে দিক । আমিন।।

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, সাংবাদিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক ও সিনিয়র সহ-সভাপতি বুড়িচং প্রেসক্লাব, কুমিল্লা।

আরো পড়ুন