রোজাদারের অন্তরে রহমতের বৃষ্টি

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির।।
inside post
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাহে রমজানের তিন দশকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তিন ধরনের বৃষ্টি ঝরে। প্রথম দশকে ঝরে রহমতের বৃষ্টি, দ্বিতীয় দশকের মাগফিরাতের বৃষ্টি এবং তৃতীয় দশকে ক্ষমা। প্রথম দশ দিন ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমতে সিক্ত হয়। দ্বিতীয় দশকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, আর তৃতীয় দশক তথা  শেষ দশকে বান্দা কান্নাকাটি এবং এতেকাফের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে নাজাত মুক্তি নিশ্চিত করবে।
প্রিয় পাঠক! আমরা রহমতের বৃষ্টিতে নিজেকে ভিজিয়ে প্রথম দশক অতিবাহিত করেছি এবং আরশের মালিক রহমত বর্ষণ করেছেন আমাদের উপর । ভাগ্যবান বান্দা সে, যে প্রভুর রহমত ধারণ করতে পারলো। আর যে অবহেলা অযত্নে প্রভুর রহমত থেকে দূরে থেকেছে, তার ব্যাপারে আমরা আর কি বলব, নবীজি সাঃ নিজেই বলেছেন,- এমন হতভাগ্য বান্দা আরশের নিচে জমিনের উপরে আর কেউ নেই । বৃষ্টি যখন হয় তখন সব জায়গায় বৃষ্টি ঝরে। কিন্তু সব ভূমি বৃষ্টির পানি ধারণ করে না। যে ভূমিটা উঁচু , বাঁকা, সেখানে বৃষ্টি ঝরালেও পানি জমে না। তেমনি আল্লাহর রহমত সব বান্দার উপর সমানভাবে ঝরছে , ঝরবে। কিন্তু যে বান্দার কলবের জমিনটা অহংকারে উঁচু হয়ে আছে, নাফরমানিতে বেঁকে গেছে, সে বান্দা খোদার রহমত ধারণ করার যোগ্যতা রাখে না । কারণ, অহংকারীকে আল্লাহ পাক যতটা অপছন্দ করেন, আর কাউকে এত বেশি অপছন্দ করেন না।
আমার প্রিয় ভাই- বোনেরা, অহংকারী মনকে বিনয়ী করার মাস মাহে রমজান। বান্দা যখন সিয়াম- সাধনা শুরু করে, আস্তে আস্তে মসজিদের সঙ্গে , কুরআনের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলে, তখন অটোমেটিক ভাবে অন্তর নরম হয়ে আসবে। চোখ ভিজে উঠবে। দুনিয়ার মায়া-মোহ তুচ্ছ মনে হবে। কবরের জীবনের জন্য এক ধরনের পেরেশানি ,টান অনুভব হবে । কিন্তু শুরুটা আপনাকেই করতে হবে। অনেক মানুষ মনে করে, কোন এক অলৌকিক শক্তি তাকে হঠাৎ ভেতরে -বাইরে বদলে দেবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বান্দা যদি নিজেকে বদলানোর জন্য প্রস্তুত না করে, নিজের ভেতরে যদি রহমত ধারণের জন্য বিনয়ী না হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা নিজ থেকে কাউকে পরিবর্তন করে দেন না।
বছরের অন্যান্য মাসে যে সুযোগটা থাকে না, মাহে রমজানে সে সুযোগ আমরা পেয়ে যাই। রমজান জুড়ে সব জায়গায় এক ধরনের ধর্মীয় আবহাওয়া পাওয়া যায়। কেউ চাইলে এ সময় খুব সহজেই নিজেকে বদলে নিতে পারে । খারাপ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। অহংকারে উঁচু মনটাকে বিনয়ে গলিয়ে নেওয়ার সুযোগ মাহে রমজান ছাড়া আর অন্য কোন মাসে এত সুন্দর, এত চমৎকারভাবে ধরা দেয় না। যারা প্রভুর সামনে দাঁড়ায় না, নিজেকে প্রভুর কাছে সমর্পণ করে না, তাদের চেয়ে হতভাগা আর কে আছে? রমজানের বৃষ্টিতে যে ভিজলো না, রহমতের প্রতিটি ফোটা যে যত্নের সঙ্গে আগলে রাখে না, তার চেয়ে ফোড়া কপাল আর কে আছে?
হে আমার ভাই -বোনেরা! আমাদের কি মন চায় না, যে প্রভু এত নিপুণভাবে আমাদেরকে সৃষ্টি করল , মায়ের পেট থেকে শুরু করে জীবনের এতগুলো বসন্ত তিলে তিলে আমাদেরকে প্রতিপালন করে আসছে, আমরা শত অন্যায়,অবাধ্যতা সত্ত্বেও যে আল্লাহ আমাদেরকে অক্সিজেন, পানি, রিজিক বন্ধ করে দেয়নি। সেই মহান আল্লাহর রহমতের কোলে ফিরে আসি। মন চায় না, একবার প্রভুর কথা মতো চলে দেখি। আপনার জন্য একটি আকর্ষণীয় অফার রেখেছেন  প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ।  হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে ফিরে পেলে বাবা-মা যত খুশি হন, আল্লাহর কোন পথ ভোলা বান্দা যখন প্রভুর রহমতের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আল্লাহ তারচেয়ে বেশি খুশি হন। হাদিসে কুদসিতে  আল্লাহ তায়ালা বলেন, বাবা-মা যেমন ডানপিটে সন্তানের জন্য পেরেশান থাকে, আমি আল্লাহর কথা না শোনা বান্দাটির জন্য আরো বেশি পেরেশান থাকি। অপেক্ষায় থাকি, একদিন না একদিন সে প্রভুকে চিনবেই। প্রভুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়বেই। যখন সে অল্প অল্প আমাকে চিনতে শুরু করে, আমি তার কাছে আরো স্পষ্ট হয়ে ধরা দেই । সে যখন প্রভুর ভাবনায় মন ঘুরায়, আমি তখন দুহাত বাড়িয়ে তার অপেক্ষায় থাকি। সে আমার দিকে হাঁটা শুরু করলে- আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। আমরা যেন, রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের চমৎকার সময় টুকু কাজে লাগাই, নিজেকে ইসলামের আলোকে আলোকিত করি। আমিন।।
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির, ধর্ম ও সমাজ সচেতন লেখক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপস্থাপক,গবেষক ও সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, বুড়িচং উপজেলা কমিটি, কুমিল্লা।
আরো পড়ুন