লাল মাটির পাহাড়ে সবুজ চা পাতার হাসি

 

প্রথমবারের মতো কুমিল্লার লালমাই পাহাড় থেকে চা পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
দুইটি পাতা একটি কুড়ি। এটি বলতেই আমরা বুঝি সিলেটের কথা বলা হচ্ছে। এবার প্রথমবারের মতো কুমিল্লার লালমাই পাহাড় থেকে দুইটি পাতা একটি কুড়ি সংগ্রহ করা হচ্ছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুর এলাকার লালমাই পাহাড় থেকে এই চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। ২০২১সালে চাষ করা হলেও এবার প্রথম চা পাতা সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাগানটি দেখতে প্রায়ই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন।
বড় ধর্মপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে মাথা তুলে আছে ছোট বড় পাহাড়। লার মাটির দুইটি পাহাড়ে প্রথমবারের মতো চা চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ের উপরে ও ঢালুতে চা গাছের চারা লাগানো হয়েছে। চৈত্রের গরমেও স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে সবুজ চা গাছ। কয়েকজন শ্রমিক চা পাতা তুলছেন। তাদের কাধে কাপড়ের তৈরি থলে। চা গাছ থেকে দুটি পাতা ও একটি কুড়ি একসাথে সংগ্রহ করছেন। সংগ্রহ করা কুড়ি ও পাতা থলেতে রাখছেন। পাহাড়ের উপরে বসানো হয়েছে পানির ট্যাংকি। সেখান থেকে পাইপ দিয়ে পানি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। চা বাগানে শেড ট্রি হিসেবে সজিনা ও কড়ই গাছ লাগানো হয়েছে। যা চা গাছকে ছায়া দিচ্ছে। কয়েকটি নাম না জানা পাখি বিভিন্ন শব্দ তুলে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
চা শ্রমিক রাজু সিং বলেন, তার বাড়ি শ্রীমঙ্গলে। এখানে থেকে চা গাছের পরিচর্যা ও পাতা তোলেন। মার্চ মাস থেকে চা পাতা তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজার কেজি পাতা তুলেছেন। পাশের পাহাড়ে আরো চা গাছ লাগানো হচ্ছে। তার আশা লালমাই পাহাড়ে সিলেটের মতো চা বাগান ছড়িয়ে পড়বে।
চা বাগানের উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম মজুমদার জানান, তার এক বন্ধু আছেন মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ উপজেলার খাসিয়া সম্প্রদায়ের একটি পুঞ্জীর মন্ত্রী জিডি সান। তিনি একদিন তার লালমাই পাহাড়ের ভূমি ঘুরে দেখেন। জিডি সান মতামত দেন এখানে চা চাষ সম্ভব। তার পরামর্শে তিনি ২০২১সালের মার্চে তিন হাজার চা গাছ লাগান। এগুলোর গ্রোথ ভালো দেখে তিন মাস পর আরো তিন হাজার চারা লাগান। প্রায় এক একর পাহাড়ে তার চা বাগান। এখন বাগানে তার ১০ হাজার চারা রয়েছে। এখানে তার এক সাথে সাড়ে ছয় একর ভূমি আছে। তিনি পুরো ভূমিতে চা বাগান করবেন বলেও পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি কিছুদিনের মধ্যে আরো ২০হাজার চারা লাগাবেন। তিনি আরো বলেন, তারা বাগানে বিটি-২ জাতের চারা বেশি। এখন হাতে চা পাতা তৈরি করছেন। তিনি শীঘ্রই চা পাতা প্রস্তুতের মেশিনও স্থাপন করবেন। তিনি চান অন্যরা যেন তার মতো এগিয়ে আসে।


স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এম এম শাহারিয়ার ভূঁইয়া বলেন, চা বাগানের উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম মজুমদার। তিনি সৃজনশীল মানুষ। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করি তার বাগান আরো বৃদ্ধি পাবে।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি অফিসার হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, পাহাড়ে বড় ধর্মপুরে প্রথমবারের মতো চা চাষ হয়েছে। এখানে চা উৎপাদনে মাটির যে ক্ষার থাকার কথা তা রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে উদ্যোক্তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। উদ্যোক্তা তারিকুল ইসলাম মজুমদার বাণিজ্যিকভাবে সফল হবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আশা করছি তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও পাহাড়ে চা চাষে আগ্রহী হবেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো.মিজানুর রহমান বলেন, জেলায় এটি প্রথম উদ্যোগ। আমরা লালমাই পাহাড়ের চা চাষের এলাকাটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। এখানে বৃষ্টির পরিমাণ কম। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে তিনি ভালো আরো করতে পারবেন। তবে তিনি কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এখানে ভালো গ্রিন টি হতে পারে বলে আশা করছি।