শঙ্খ চিলের সাথে দুই ঈদ!

মহিউদ্দিন মোল্লা,

মা, স্ত্রী-সন্তান। তার পরিবারে ৫জন সদস্য। তিন মাস আগে আরেকজন নতুন সদস্য যোগ হয়েছেন। তবে তিনি মানুষ নন। শঙ্খ চিল পাখি। গত দুই ঈদ তার কেটেছে এই পরিবারের সাথে। গত ঈদ-উল ফিতরের দিন এই পরিবারে আসে পাখিটি। তাদের সাথে থাকে খায়। পাশের কুশিয়ারা গ্রামের কিশোর রাসেল তাকে এই বাড়িতে এনে রেখে যায়। তার ধারণা, অন্যত্র রেখে দিলে শিশুরা তাকে খেলনা বানিয়ে মেরে ফেলবে। তাই এখানে নিয়ে আসা। বাড়ির মালিক তাকে প্রাণি সম্পদ অফিসে নিয়ে যান। চিকিৎসা করান। তারপরেও তার একটি ডানা নষ্ট হয়ে যায়। সে উড়তে পারে না। ছোট শঙ্খ চিলের ছানা এখন অনকে বড়সড় হয়ে গেছে। পাখিটির দেখাশোনা করছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের মতিন সৈকত। এ উপজেলার আদমপুর, পুটিয়াসহ আশপাশের গ্রামে প্লাবন ভূমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হলেই চোখে পড়ে মাছের খামারে ব্যবহার করা জালে কোনো পাখি বা গুইসাপ আটকা পড়েছে। মতিন সৈকত নেমে পড়েন সেটি উদ্ধার করতে। বেশি আহত হলে চিকিৎসা দিয়ে অবমুক্ত করেন। নয়তো তাৎক্ষণিক মুক্ত স্থানে ছেড়ে আসেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। এর মধ্যে ১৫০০ পাখি উদ্ধারের পর অবমুক্ত করেন। এ ছাড়া বন বিড়াল, গুইসাপ, বেজি, শিয়ালসহ অনেক বন্যপ্রাণীকে অবমুক্ত করেছেন। মতিন সৈকত স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। এর পাশাপাশি কৃষি নিয়ে তিনি কাজ করেন।
ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক মীর ফজলে রাব্বী বলেন, তার কাজ গুলো আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। সমাজ ও পরিবেশ দরদী মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সেখানে মতিন সৈকত ব্যতিক্রম।
মতিন সৈকত বলেন, পাখি-প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখে। তাদের বিপদে পড়তে দেখলে খারাপ লাগে। তাদের উদ্ধার করে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়ায় আনন্দ খুঁজে পাই। এ ছাড়া পরিবেশ বিষয়ে গবেষণা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিবেশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, মতিন সৈকত একজন পরিবেশ সচেতন মানুষ। পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তিনি। তার কাজগুলো দেখেছি। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একজন করে মতিন সৈকতের মতো লোক প্রয়োজন। তাদের হাত ধরে রক্ষা পেতে পারে আমাদের পরিবেশ প্রকৃতি।