শিশুদের সোনালী চোখে উপচে পড়বে হাসি

 

inside post

মনোয়ার হোসেন রতন।।

শিশুরা হলো মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। শিশুরা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ, শিশুরাই আগামী দিনের স্থপতি। তাদের চোখে যে স্বপ্ন জ্বলে, সেই স্বপ্নই একদিন জাতি, সমাজ ও মানবসভ্যতাকে আলোকিত করে তুলবে। আজকের পৃথিবী নানা সংকট, অন্যায়, দুর্নীতি, যুদ্ধ আর অস্থিরতার অন্ধকারে ডুবে আছে। কিন্তু এই অন্ধকারের ভেতর দিয়েই জেগে উঠছে শিশুদের সোনালী স্বপ্নের আলো। আমাদের বিশ্বাস, একদিন সেই আলোয় আলোকিত হবে সমগ্র মানবসমাজ, আর শিশুদের সোনালী চোখে উপচে পড়বে হাসি।

মানবজীবনের প্রথম পাঠ শুরু হয় পরিবার থেকে। পরিবারই হলো শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। মা-বাবার আচরণ, ভালোবাসা, স্নেহ, উৎসাহ ও শিক্ষা শিশুর চরিত্র গঠনের ভিত্তি। যে পরিবারে ভালোবাসা আছে, যে পরিবারে নৈতিকতা ও আদর্শ আছে, সেই পরিবার থেকেই গড়ে ওঠে একজন সৎ, দায়িত্ববান ও মহান মানুষ। তাই শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ার প্রথম দায়িত্ব মা-বাবার। তাদেরকে শুধু সন্তানের ভরণ-পোষণ নয়, বরং মানসিক উন্নয়ন ও নৈতিক বিকাশেও ভূমিকা রাখতে হবে।

আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় সংকট হলো শিক্ষা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়। প্রযুক্তির যুগে আমরা যেমন এগিয়ে যাচ্ছি, তেমনি হারাচ্ছি মানবিকতার আলো। শিশুদের হাতে মোবাইল, ইন্টারনেট ও যান্ত্রিক বিনোদনের সহজলভ্যতা তাদের কল্পনা ও স্বপ্নকে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে। অথচ শিক্ষা কেবল বই পড়া নয়—শিক্ষা মানে সত্য জানা, সুন্দর দেখা, ন্যায় শেখা, ভালোবাসা অর্জন করা। শিশুদের শিক্ষা হতে হবে এমন, যেখানে তারা জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা, মানবিকতা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্ববোধ শিখবে।

শিক্ষার পাশাপাশি কল্পনাশক্তিই শিশুদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কল্পনা হলো সেই ডানা, যা দিয়ে শিশুরা উড়ে যায় ভবিষ্যতের আকাশে। একজন শিশু যখন কল্পনা করে, তখন তার মনে জন্ম নেয় স্বপ্নের বীজ। আর সেই স্বপ্নই তাকে এগিয়ে নিয়ে যায় সত্যের পথে, সৌন্দর্যের পথে। যদি আমরা শিশুদের কল্পনাশক্তিকে জাগ্রত করতে পারি, তবে তারা একদিন পৃথিবীকে করবে আরও সুন্দর ও আলোকিত।

বর্তমান সমাজে শিশুরা নানা সমস্যার শিকার। দারিদ্র্য, অবহেলা, নির্যাতন, বঞ্চনা—এসবই শিশুদের মানসিক বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, অনেক শিশু শ্রমে জড়িয়ে পড়ছে, অনেক শিশু আবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। অথচ প্রতিটি শিশুরই অধিকার আছে শিক্ষা পাওয়ার, ভালোবাসা পাওয়ার, নিরাপত্তা পাওয়ার ও স্বপ্ন দেখার। সমাজ যদি এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তবে মানবসভ্যতা কখনোই এগিয়ে যেতে পারবে না।

আমরা যদি সত্যিই ভবিষ্যৎকে সুন্দর দেখতে চাই, তবে আজই আমাদের শিশুদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি শিশুকে দিতে হবে ভালোবাসা, নিরাপত্তা, সঠিক শিক্ষা ও স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা। তাদেরকে বুঝতে হবে—তাদের হাসি, তাদের স্বপ্ন, তাদের ভালোবাসাই হলো আগামী দিনের শক্তি।

একদিন শিশুরা নিজেদের কণ্ঠে নতুন পৃথিবীর ডাক দেবে। তারা বলবে— “আমরা ঘৃণা চাই না, চাই ভালোবাসা। আমরা যুদ্ধ চাই না, চাই শান্তি। আমরা অন্ধকার চাই না, চাই আলো।”

যদি আমরা এই কণ্ঠস্বর শুনতে পাই, যদি আমরা সত্যিই এই কণ্ঠস্বরকে মূল্য দিই, তবে পৃথিবী বদলে যাবে। শিশুরা তখন আর অন্ধকারের মধ্যে বেড়ে উঠবে না, তারা বড় হবে আলোয়, ভালোবাসায়, স্বপ্নে।

একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিশুদের উপর। যদি শিশুরা হাসতে শেখে, ভালোবাসতে শেখে, স্বপ্ন দেখতে শেখে—তবে সেই জাতি হবে মহৎ, দায়িত্ববান ও আলোকিত। শিশুরা শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজ, পুরো জাতি ও পুরো মানবজাতির জন্য আশার প্রদীপ। তাদের সোনালী চোখে যখন আনন্দের ঝলক ফুটে উঠবে, তখন আমরা বুঝব—পৃথিবী সত্যিই বদলে গেছে।

মনে রাখতে হবে, শিশুদের নিয়ে ভাবা মানেই ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা। শিশুদের জন্য আমরা যদি একটি আলোকিত পৃথিবী তৈরি করতে পারি, তবে আমাদের সমাজ, আমাদের দেশ, এমনকি আমাদের সমগ্র মানবসভ্যতাই আলোকিত হয়ে উঠবে।

তাই আসুন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি— “আমরা শিশুদের হাতে তুলে দেবো স্বপ্নের আলো, আমরা শিশুদের চোখে ফুটিয়ে তুলব ভালোবাসার হাসি, আমরা শিশুদের শেখাব সত্য, সুন্দর আর মানবিকতার পথ।”

একদিন সত্যিই শিশুদের সোনালী চোখে উপচে পড়বে হাসি। সেই হাসি শুধু শিশুদের নয়, সেই হাসি হবে আমাদের সবার। সেই হাসিতেই জেগে উঠবে নতুন পৃথিবী—একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও আলোকিত পৃথিবী।

আরো পড়ুন