শেখ কামালকে বিতর্কিতের চেষ্টাকারীরা আজ মন্ত্রী পরিষদে !  

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের তনয় শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকীতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এম.পি। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দকে তিরস্কারও করেন। স্থানীয় নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসককে সাথে নিয়ে শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করলেও জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের সাথে পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (০৫ আগস্ট) শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্থানীয় নিয়াজ মুহাম্মদ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সকাল ১০টায় শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্থানীয় সাংসদ র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারসহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। পরে স্টেডিয়াম ভবন মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে শেখ কামালের জীবনী বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের আড়ম্বরপূর্ণ কর্মসূচি না থাকায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী। এক পর্যায়ে তিনি স্টেডিয়াম চত্বর ছেড়ে যেতে চান। তখন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার তাঁকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করলে তাদের দু’জনের মধ্যে প্রকাশ্যে মতভেদ হয়। পরে অবশ্য আল মামুন সরকার শারীরিক অসুস্থতার কারণে আলোচনা সভায় যোগ দিতে পারেন নি।
স্টেডিয়াম মিলনায়তনে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামাল ছিলেন একজন বহুগুণে গুনান্বিত ব্যক্তি। মুক্তিযুদ্ধ, ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অবিষ্মরণীয়। তিনি ছিলেন কর্মী বান্ধব একজন নেতা। তাঁর জন্মদিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আড়ম্বর আয়োজন না থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু তাই নয়, যারা আওয়ামী লীগ মনোনীত জনপ্রতিনিধি তাদের পক্ষ থেকেও তেমন আয়োজন চোখে পড়েনি। শহরে হাতেগোণা কয়েকটি প্লেকার্ড ছাড়া আর কিছুই নজরে আসেনি। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে আমি লজ্জিত। ধিক জানাই আমি নিজেকে এবং দলের নেতাকর্মীকে, আমরা যারা আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে চলি। আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত, যে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকীতে আমাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্লেকার্ড, ফেস্টুন বা অনাড়ম্বর আয়োজন নেই। আমাদের জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কারো কি মনে পড়লো না যে, আমরা শেখ কামালের একটি ছবি দিয়ে তাকে শ্রদ্ধা জানাই। বিষয়টি যে আমারও মনে পড়েনাই সেজন্য আজ আমি নিজেকে ধিক্কার জানাচ্ছি, নিজেকে ঘৃণিত মনে করছি। কারণ আমি তো এখনো শেখ কামাল, শেখ মুজিবের নাম বিক্রী করেই খাই। আমার দেহ যে হৃষ্টপুষ্ট, তাদের নাম বিক্রি করেই তো তা হয়েছে। তিনি শেখ কামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার ঘটনায় বলেন, সেদিন যারা শেখ কামালকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলো, তারা আজ বর্তমান মন্ত্রী পরিষদেও আসীন! আমাদের জন্য তা ভীষণ লজ্জার। তিনি ক্ষোভের সুরে আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমরা ব্যবহার করি। আমাদের বিত্ত, বৈভব, পদ-পদবী বাড়ানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন সেটার জন্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করি। পরে তিনি স্বার্থের রাজনীতির উর্ধ্বে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধু ও শেখ কামালের আদর্শকে ধারণ করে জনকল্যাণে কাজ করে যেতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবির, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন ফিরোজুর রহমান ওলিও, প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিশেষ দোয়া ও স্টেডিয়ামের পাশে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রোপণ করা হয়।