সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে প্রবাসে গিয়ে হলেন লাশ!

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।।
সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে এনজিও থেকে ধারদেনা করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে রৌফ মিয়া ওরফে রুক্কু মিয়া পাড়ি জমান প্রবাসে। অভাব দূর হবার বদলে পরিবার পাচ্ছে রুক্কুর লাশ! মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রৌফ মিয়ার পরিবারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় চলছে কেবলই মাতম। পরিবারের দাবি, রুক্কুর লাশ যেনো দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়। নিহত রৌফ মিয়া ওরফে রুক্কু জেলার কসবা উপজেলার কাইয়ুমপুর ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে গত ২৭ মার্চ ওমরাহ হজের যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় ১৮ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নিহত রৌফ মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামে। দুই পুত্র, এক কন্যা নিয়ে অকূল সায়রে নিপতিত হলেন নিহত রৌফ মিয়ার স্ত্রী মাসুমা বেগম। পরিবারের একটাই দাবী, নিহতের লাশটা যেনো অন্তত তারা পান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিকশাচালক ছিলেন রৌফ মিয়া। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। একমাত্র কন্যা শিউলি আক্তারকে বিয়েও দিয়েছেন। বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৬) বাবার সঙ্গে সংসারে হাল ধরতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। সবার ছোট ছেলে হৃদয় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। বড় ছেলে এবং নিজে রিকশা চালিয়েও পরিবার নিয়ে চলতে কষ্ট হচ্ছিলো রৌফ মিয়ার। তখনই পরিকল্পনা করেন বিদেশে গিয়ে টাকা উপার্জনের। স্থানীয় এনজিও থেকে ধারদেনা ও সুদে সাত লাখ টাকা যোগাড় হলে তিন বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। দেশটির দাম্মাম এলাকায় রেস্টুরেন্টে সামান্য বেতনে পরিছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন রৌফ মিয়া। তিন বছর যাবত প্রবাসে থাকলেও এখনো শেষ হয়নি তার ঋণের বোঝা। তাই যাওয়ার পর আর দেশে আসেননি।
গত ২৭ মার্চ বিকেলে পবিত্র ওমরাহ্ হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে বাসে মক্কা যাচ্ছিলেন রৌফ মিয়া। পথে একটি সেতুতে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায় বাসটি। যাত্রীবাহী বাসটির ব্রেক কাজ না করায় আসির প্রদেশ ও আবহা শহরের সংযোগ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বাসে আগুন ধরে ২২ জন নিহত হন। এদের ১৮ জনই বাংলাদেশি। রৌফ মিয়া ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। সেখানকার এক স্বজনের মাধ্যমে তার পরিবার মৃত্যুর কথা জানতে পারেন।একদিকে প্রবাসে পরিবারের উপার্জনক্ষম মানুষটির মৃত্যু অপরদিকে মাথার ওপর ঋণের বোঝা। এসব চিন্তায় বাকরুদ্ধ পরিবারের মানুষগুলো।
নিহতের স্ত্রী মাসুমা বেগম বলেন, ‘পরিবারের সুখের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিলেন আমার স্বামী। বিদেশ যাওয়ার সময় যে ঋণ হয়েছিলো, তার সামান্যই শোধ হয়েছে। সবকিছু যেনো শেষ হয়ে গেছে। এখন কিভাবে এই ঋণ শোধ করবো, কিভাবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাঁচবো- কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি আমার স্বামীর মরদেহটি দেশে ফিরিয়ে আনার দাবী জানাই।’ নিহত রৌফ মিয়ার মেয়ে মেয়ে শিউলি আক্তার বলেন, ‘রওয়ানা হওয়ার ১০মিনিট আগে আব্বুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিলো। এরপর থেকে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়৷ এখন আমাদের একটাই দাবি, আমার বাবার মরদেহটি যেনো দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়।’

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল এহসান খান বলেন, ‘সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কসবা উপজেলার রুকু মিয়া নামের এক প্রবাসীর নিহতের খবরটি শুনেছি। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক। তার মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’