সনাক কুমিল্লার আয়োজনে ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

 

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জাতিগত নিপীড়ন, রাজনৈতিক বঞ্চনা, অর্থনৈতিক শোষণ, দুর্নীতি, অনিয়ম, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণসহ সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত জোরালোভাবে স্বার্থান্বেষী মহলের দুর্নীতি পরায়ণতায় উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। দুর্নীতিবাজদের কখনো চাটার দল আখ্যায়িত করেছেন; কখনও বা তুলনা করেছেন জানোয়ারের সঙ্গে। দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বয়কটে সরকারের পাশাপাশি তিনি সাধারণ মানুষকেও দুনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট এই মহান নেতার প্রয়াণ দিবস। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লা ও টিআইবি’র উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস পালনের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে “ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ” ওয়েবিনার অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়। সনাক কুমিল্লার সহ সভাপতি অধ্যাপক নিখিল চন্দ্র রায়ের সঞ্চালনায় সনাক সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালি সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির এরিয়া কো-অর্ডিনেটর প্রবীর কুমার দত্ত।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা এর চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: আবদুস ছালাম বলেন, বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে উপলব্ধি করেছিলেন আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অন্যতম বাধা হচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সোচ্চার এবং দৃঢ় অবস্থানে। বঙ্গবন্ধু তার বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতিতে ও লেখায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেছিলেন। দেশ পুনর্গঠনে দুর্নীতি যে বিরাট একটি অন্তরায় এবং দুর্নীতির সঙ্গে যে মূলত শিক্ষিত সমাজের ক্ষুদ্রতম অংশ জড়িত, সে বিষয়টি তিনি একাধিকবার উচ্চারণ করার পাশাপাশি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সতর্ক করে আত্মশুদ্ধির উপদেশ ও আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কুমিল্লা আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, ভঙ্গুর অর্থনীতি সচল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, প্রশাসনকে পুনর্গঠন করে সচল, জনগণের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়, সর্বোপরি একটি সংবিধান প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুকে মোকাবিলা করতে হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চাপ, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো। বঙ্গবন্ধু যখন সৃষ্ট সব সংকট ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠে দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে এনে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, তখনই তাকে হত্যা করা হয় সপরিবারে।

দৈনিক রুপসী বাংলার বার্তা সম্পাদক আসিফ তরুণাভ বলেন, বঙ্গবন্ধু তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেছিলেন, দেশের শতকরা ৫ ভাগ শিক্ষিত লোক দুর্নীতি করে। কিন্তু আজকের বাস্তবতা হলো, বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত সোনার বাংলায় পরিসংখ্যান করার সময় এসেছে— ‘কত ভাগ শিক্ষিত লোক দুর্নীতি করে না বা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয় না বা নিজে দুর্নীতি না করলেও নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে ও ভয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে না।’ দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রের নির্বাহী ও বিচার বিভাগের আরো দৃঢ়, কঠোর ও ত্বরিত ভূমিকা ও দায়িত্ব পালন এখন সময়ের চাহিদা বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে।

দৈনিক প্রথম আলোর স্টাফ রির্পোটার গাজিউল হক সোহাগ বলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেমন দুর্নীতিবিরোধী, তেমনি দুর্নীতি প্রতিরোধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও ছিলেন বজ্রকণ্ঠ। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চের ভাষণে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধের দিক-নির্দেশনা দেন। দুর্নীতিমুক্ত স্বদেশের স্বপ্ন পূরণে বঙ্গবন্ধু সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।

আলোচনায় আরো যুক্ত ছিলেন সনাক সহসভাপতি আইরিন মুক্তা অধিকারী, সনাক সদস্য বদরুল হুদা জেনু, দিলনাশি মোহসেন, অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার জাহান, স্বজন ও ইয়েস প্রতিনিধিবৃন্দ।

 

–সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।।