হতে পারে দর্শনীয় স্থান- বাধা বেহাল রাস্তা

 

লিচুর রাজ্য আখাউড়া-বিজয়নগর

ইলিয়াছ হোসাইন, বিজয়নগর থেকে ফিরে।
ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার আখাউড়া এবং বিজয়নগর উপজেলার দুর্গাপুর,বক্তামোড়া, সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর,কালাছড়া এবং আউলিয়া বাজারসহ প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে উঠোন ভরা লিচুর বাগান। চারদিকে পাকা লিচুর মৌ মৌ ঘ্রাণ। ছোট বাগানগুলো বিশ থেকে ত্রিশটি গাছ। বড় বড় বাগানগুলো ষাট থেকে সত্তরটিরও বেশি গাছ দিয়ে গড়ে উঠেছে। গাছের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত ঝুলছে টসটসে পাকা লিচু! মানুষের সাথে সাথে পাখিরাও ভাগ বসাচ্ছে মৌসুমের এই রসালো ফলে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের গাছ তলায় ঝরে পড়া লিচু কুড়ানোর দৃশ্যও নজর কাড়ে পর্যটকদের! এ এলাকা হতে পারে দর্শনীয় স্থান। তবে বড় বাধা বেহাল রাস্তা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানিরা চকি পেতে ব্যস্ত বাগান পাহারায়। কিছু বাগানি ব্যস্ত থাকেন শাখায় উঠে লিচু সংগ্রহে। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা কেউ ছিঁড়ছে,কেউ টুপ করে মুখে গিলছে। আবার কেউ ব্যস্ত লিচুর থোকার সাথে নিজেকে ক্যামরা বন্দি করতে ব্যস্ত। বাগান ঘুরে-ফিরে সবশেষে ব্যাগ ভরে কিনে নিয়ে যান ক্রেতারা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা খুচরা ক্রেতার সাথে পাইকারদেরও ভিড় জমে এখানে। স্থানীয় পাইকাররা বাগান থেকে কিনে নিয়ে পাশের আউলিয়া বাজার লিচুর পসরা সাজিয়ে বসেন। বাগানে এক’শ লিচুর খুচরা মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০টাকা পর্যন্ত রাখেন।
বিজয়নগর উপজেলার মিরেসানীর স্থানীয় স্কুল শিক্ষিকা কানিজ ফাতেমা জেসি এবং শিক্ষক কবির আহম্মেদ জানান,লিচুর মৌসুমে একটা বাগান ধাপে ধাপে তিনবার বেচাকেনা হয়ে মালিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। যখন ফুল আসে তখন গেরস্তদের থেকে প্রথম ক্রেতা কিনে নেয়। ফুল থেকে যখন মুকুল আসে তখন দ্বিতীয় ক্রেতা কিনে নেয়। তারপর যখন লিচু বড় হয় তখন তৃতীয় ক্রেতা বাগানের লিচুর অবস্থা দেখে দর-দাম করে কিনে নেয়। আমাদের বিজয়নগর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে,প্রত্যেক বাড়িতে কম-বেশি লিচু বাগান রয়েছে। বিজয়নগর-আখাউড়ার লিচু সারাদেশের মানুষের নিকট যাচ্ছে। এটা ভালো লাগার বিষয়।


বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার্থী স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ নিহাল উদ্দিন মাহি বলেন,আমরাও বাগান করেছি। প্রায় ৩০টি গাছ আছে। ব্যবসার পাশাপাশি বাবা বাগানের দেখাশোনা করছেন। তবে আমাদের গাছগুলো লিচুর জন্য প্রস্তুত হতে আরো দুই থেকে তিন বছর লাগবে। আমরা গাছগুলো স্থানীয় নার্সারি থেকেই সংগ্রহ করে রোপন করেছি। বেকারত্ব দূর করতে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণরা চাইলে লিচুর মৌসুমে সিজনাল ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
বক্তামোড়া গ্রামের এক বাগানি জানান,এ বছর বৃষ্টিপাত ঠিকমতো না হওয়ায় অনেক ফুলও ঝরে গেছে। লিচুর আকার কিছুটা ছোট রয়ে গেছে। আবার মে মাসের অসময়ের বৃষ্টির কারণেও লিচুর রঙ পরিবর্তন হয়েছে। অনেক লিচু ফেটে-পঁচে ঝরে পড়ছে। এতে কিছুটা ক্ষতি হলেও বাগানিরা ভালো লাভের আশা দেখছেন। একটি বাগান থেকে একজন বাগানি সিজনে বাগান ভেদে পঞ্চাশ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন।


কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী জানান,লিচুর বাগান দেখতে এবং ক্রয় করার উদ্দেশ্যে এসেছি। তবে কষ্টের বিষয় হচ্ছে আখাউড়া জংশন থেকে নেমে বিজয়নগর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশা। মনে হয় কোনো অভিভাবক নেই। চোখের সামনেই যেনো অটো-সিএনজি অটো রিকশা উল্টে যাচ্ছে। যতো দূর চোখ যায় রাস্তা গর্ত-খন্দে ভরা। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আশা রাখি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কড়া নজর দেওয়া উচিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থী আসবে এবং লিচু সরবরাহের সুবিধা হবে।