হাজার কোটি টাকার ধাক্কা কুমিল্লার জুয়েলারি ব্যবসায়

 

আবদুল্লাহ আল মারুফ।।
লকডাউনের দেড় বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা কমেছে কুমিল্লার জুয়েলারি শিল্পে। চাকুরি হারিয়েছেন প্রায় দুই হাজার স্বর্ণ শিল্পী। একশ’র বেশি মালিক বন্ধ করেছেন ব্যবসা। তার মধ্যে স্বর্ণের দাম বাড়ায় মাথায় হাত উঠেছে কুমিল্লার মাঝারি ও ছোট দোকান মালিকদের।

কুমিল্লার বেশির ভাগ জুয়েলারি দোকান রাজগঞ্জ, ছাটিপট্টি, চকবাজার, রাণীর বাজার ও তার আশেপাশে অবস্থিত। এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায় স্বর্ণের দোকানে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। অনেকে আসছেন শুধু বিক্রি করতে। আবার অনেকে পুরোনো স্বর্ণ দিয়ে নতুন করে বানিয়ে দেয়ার জন্যে আসছেন। এছাড়াও কুমিল্লা নগরীর বাইরে উপজেলা শহর ও মফস্বলেও জুয়েলারি দোকান রয়েছে। নগরীর ৩৬০টি মিলিয়ে কুমিল্লা জেলায় তালিকাভুক্ত জুয়েলারি দোকানের সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এক হাজার দোকানে বিক্রির কাজ করেন প্রায় আড়াই হাজার কর্মচারী। এই সকল দোকানের স্বর্ণ শিল্পী বা স্বর্ণের কারিগর প্রায় দশ হাজারের অধিক। যাদের প্রত্যেকের পারিশ্রমিক দেয়া হয় তাদের কাজের উপর।

মিজানুর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, ছোট ভাইয়ের বিয়ে। তাই নতুন বউকে ঘরে তোলার জন্য সামান্য কিছু জিনিস পত্র দিয়েই এখন বিয়ের কাজটা সারাবো। স্বর্ণের দাম বেড়েছে বেশি জিনিপত্র কেনা যাবে না।

সুজন কর্মকার নামের এক স্বর্ণ কারিগর বলেন, স্বর্ণ কারিগরদের কোন বেতন নেই। যা কাজ করবে তার উপর পারিশ্রমিক দেয়া হয়। প্রতিভরি স্বর্ণের কাজ করলে তারা পায় ৪০০০ হাজার টাকা। এই কাজের হিসাব হয় প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে। একজন কারিগর কত ভরি স্বর্ণের কাজ করেছেন তা হিসেব করে তাদের বাৎসরিক পারিশ্রমিক দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, লকডাউন পূর্ব সময়ে একজন কারিগর বছরে প্রায় দুই’শ ভরি স্বর্ণের কাজ করতেন। ১৮ মাস দোকান বন্ধ থাকায় তেমন কাজ নেই দোকানে। যা আসে টুকিটাকি করছেন। গত বৈশাখে প্রতি কারিগর গড়ে ৭০ ভরি স্বর্ণের কাজ করেছেন। যা খুবই সামান্য। অর্থাৎ লকডাউনের পূর্বে তাদের আয় ছিল বছরে আট লাখ টাকা। লকডাউনে তাদের বছরের আয় কমে এখন দুই লাখ আশি হাজার টাকা।

প্রশান্ত জুয়েলার্সের স্বত্তাধিকারী স্মরণ সাহা বলেন, আমাদের খুবই খারাপ সময় যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমার দুজন কর্মচারী চলে গেছেন। তাদের কাজ দিতে পারছিনা। শুনেছি তারা এখন অন্য পেশায় আছেন। আমাদের আয় প্রায় ষাট শতাংশ কমে গেছে। যারা আসছেন তারা বিক্রির জন্যই আসছেন। ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে। তার মধ্যে ঘর ভাড়া, কারেন্ট বিল, পানির বিল, সিটি কর্পোরেশন বিল, কর্মচারীদের বেতন, নিজের পরিবার পরিজন, বাসা ভাড়া আর আনুসাঙ্গিক খরচের সাথে আসলে দোকানে আয়ের কোন মিলই নেই। কেমন যে সময় কাটছে বলার মত না।

৪০ বছর স্বর্ণ শিল্পী হিসেবে কাজ করা মানব ধর জানান, আমার ছোট বেলা থেকেই স্বর্ণ শিল্পী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা। কিন্তু এমন আর কখনো দেখিনি। যেন স্বর্ণ ব্যবসায় খরা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি কুমিল্লা জেলার সভাপতি আলহাজ¦ শাহ মো. আলমগীর খান জানান, প্রায় সব দোকানেই কিছু নিয়মিত ক্রেতা ছিল। যারা প্রতিমাসেই স্বর্ণ কেনা বেচা করতো। কিন্তু লকডাউনে সেসব ক্রেতা নেই। এছাড়াও লকডাউনের পূর্বে শহরের প্রতি দোকানের মাসিক ব্যবসা ছিল গড়ে বিশ লাখ টাকা। বর্তমানে সেসব দোকনে মাসিক ব্যবসা গড়ে সাত লাখ টাকা। যা লকডাউনকালীন সময়ের তুলনায় চৌদ্দ লাখ টাকা কম। সেই হিসেবে আঠারো মাসে দোকান গুলোর ব্যবসা কমেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। যা এযাবত কালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।

তিনি আরও জানান, লকডাউনে আমরা আলোচনা করে প্রতি দোকানের এক মাসের ভাড়া মওকুপের ব্যবস্থা করেছি। যারা যারা বেশি সমস্যায় পড়েছেন তাদের আমরা সাহায্যের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কি করার সবারতো একই অবস্থা।