হোমনায় বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ

 মহিউদ্দিন মোল্লা
কুমিল্লার হোমনায় বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে পরিচালতি বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ৬১তম সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার উপজেলার হরিপুর গ্রামে পাঁচটি ধাপের শেষ ধাপে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এদিন মোট ১৪৬ জন উপকারভোগীর মাঝে ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়। এনিয়ে মোট ৫টি ধাপে ৬১তম সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণের আওতায় ৬০৫ জন উপকারভোগীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে ৬৯ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা।
হরিপুর গ্রামে ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক,  বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন। বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হোমনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম মাইনুল কবির, সিনিয়র অফিসার আমির হোসেন আনোয়ার, ডেপুটি ম্যানেজার মোশারফ হোসেনসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। স্বাগত  বক্তব্য  রাখেন  সাংবাদিক চান  মিয়া।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, পৃথিবীর কোথাও সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয় বলে আমার জানা নেই। এটা  বিরল ঘটনা।  মানুষের কল্যাণের জন্য এভাবে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ শুধুমাত্র বসুন্ধরার পক্ষেই সম্ভব। বসুন্ধরা গ্রুপ দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মহোদয় আমাকে বললেন- উত্তরবঙ্গের মানুষ কষ্টে আছে। তাঁদের জন্য কী করা যায়? তখন আমি তাঁকে বললাম- মানুষের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন। এরপর তিনি ৫০ হাজার পরিবারকে এক মাসের করে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে দেওয়া এসব খাদ্য সহায়তা পেয়ে মানুষ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য হাত তুলে দোয়া করেছে। কয়েক মাস আগে শীতের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে দেড় লাখ দরিদ্র মানুষকে শীতবস্ত্র দিয়েছেন তিনি। মানুষ শীতবস্ত্র পেয়ে বসুন্ধরার জন্য দোয়া করেছে। আমরা আপনাদের কাছ থেকে দোয়াটাই চাই।
তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান। গত পাঁচ বছরে তাঁর উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থান দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খুঁজে খুঁজে বের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছি আমরা। তিনি এদেশের বিভিন্ন স্থানে অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের ঘর নেই ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। আবার অনেককে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে সাবলম্বী করে তুলতে সহায়তা করছেন। বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনও তাঁর একটি সেবমূলক প্রতিষ্ঠান। যারা এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন, সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ পাচ্ছেন- তাঁরা এই ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঋণের অর্থ ফেরত দেবেন। তাহলে এই কার্যক্রম আরও প্রসারিত হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ২০০৫ সালে চিন্তা করলেন এলাকার মানুষের জন্য কী করা যায়। যেটাতে মানুষের উপহার করে, কিন্তু এতে কোন লাভ থাকবে না। সেই চিন্তা থেকে ২০০৫ সালের ১২ আগস্ট থেকে শুরু হলো সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ। প্রথমে এই কার্যক্রম ছিলো বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের জন্মস্থান বাঞ্ছারামপুর উপজেলায়। এক পর্যায়ে তিনি বললেন এই কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে হবে। সেই নির্দেশনায় প্রথমে বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা পার্শ্ববর্তী উপজেলা হোমনা ও নবীনগরে বিস্তার লাভ করেছে। ২০০৫ সাল থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নিয়মিত এই ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, করোনার এই ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। শুরু থেকে এই পর্যন্ত ২২ হাজার ৬৭২ জন দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত লোকদের মাঝে ১৮ কোটি ৯১ লাভ ১৭ হাজার ৫০০ টাকার সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে এই পর্যন্ত সর্বমোট আদায় করা হয়েছে ১৬ কোটি ৫২ লাখ ৪৯ হাজার ৭০০ টাকা। বর্তমানে মাঠে অবশিষ্ট আছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৬৭ হাজার ৮০০টাকা। এরই মধ্যে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ পেয়ে অনেক দরিদ্র মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। হয়ে উঠছেন সাবলম্বী। আমরা চাই এই কার্যক্রম আরও প্রসারিত হোক। এজন্য সকলের সহযোগিতা এবং সময় মতো ঋণের টাকা ফেরত দিয়ে উপকারভোগীদের ফাউন্ডেশনের পাশে থাকতে হবে। ৬১তম সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ বিতরণের আওতায় ৬০৫ জন মানুষ উপকৃত হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হোমনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, এভাবে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ দেওয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বুকে একটি বিরল দৃষ্টান্ত। আমি সব সময় বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে থাকবো। হোমনায় তাদের যেকোন প্রয়োজনে এগিয়ে যাবো। আশা করছি এই ফাউন্ডেশন থেকে সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ঋণ পেয়ে হোমনার দরিদ্র মানুষ উপকৃত হবেন।
বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, এই ঋণ শুধু নারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, যা দিয়ে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল এবং শাকসবজি চাষসহ ৩২ ধরনের কাজে নারীরা এই ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করে উপকার পাচ্ছেন। ঋণ নেওয়ার ৩ মাস পার থেকে মোট ১২টি কিস্তিতে এই টাকা পরিশোধ করবেন উপকারভোগীরা। আমাদের লোকজন উপকারভোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঋণের অর্থ অদায় করে থাকে।