হোমনায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, আহত ২০

 

অফিস রিপোর্টার।।

কুমিল্লার হোমনায় তুচ্ছ ঘটনায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে উপজেলার কাশিপুর বাজার। এতে দুই গ্রামের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। গুরুতর আহতদের কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঢাকা ও কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনার সূত্রপাত হয়ে শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ভাষানিয়া ইউনিয়নের কাশিপুর ও ওমরাবাদ গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান।

স্থানীয় এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কাশিপুর-মনিপুর সংযোগ সড়কে কাশিপুর পূর্বপাড়া মসজিদের পাশে ওমরাবাদ গ্রামের আক্তার হোসেনের ছেলে সিএনজি অটো রিকশা চালক সাব্বির জোরে হর্ন বাজালে পথে দাঁড়ানো কাশিপুর গ্রামের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া, হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। সিএনজি অটো রিকশা চালক সাব্বির কাশিপুর গ্রামে গিয়ে অন্যদের কাছে এই ঘটনা জানায়। ওমরাবাদের লোকজন কাশিপুর বাজারে গেলে পথিমধ্যে আটকে তাদের মারধর করা হয়। শনিবার সকালে লোকজন নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান কাশিপুর বাজারে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ওই সময় ওমরাবাদ ও কাশিপুর উভয় গ্রামের লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতরর হলেন- কাশিপুর গ্রামের আরাফাত (৯), সানু (৪৫), মাঝহারুল (২২), দিদার (১৮), জহির মাস্টার (৩০), হুমায়ুন (৪৮), বিল্লাল (২৬), শওকত (৩০) বাদল (৩২), আমির (৪৫), নসু মিয়া (৫৫), শামীম (২৫), ইব্রাহিম (২৫), রাইসাব (২১), সজিব খান (২১), ইয়াসিন (১৮)। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অন্তত আহত অনেককে ঢাকা ও কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাজারের দোকানপাটে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। হোমনা মুরাদনগর সড়কের অন্তত দুই শ মিটার রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট ছোট বোতলের কাঁচের টুকরো। খালি পায়ে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে মানুষের। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ওমরাবাদের লোকজন কাশিপুর বাজারে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ধারালো দা’ শাবল দিয়ে আঘাত করে অন্তত ষোলটি দোকানের ক্ষতি করা হয়েছে।

আহত আরাফাতের মা জানান, ওমরাবাদ শ্যামপুর গ্রামের লোকজন কাশিপুরের লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া হলে আমাদের ঘরে ঢুকে ভয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা তার ছেলেকে বের করে মারধর করা হয়েছে। চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সাদেক সরকার বলেন, গতকালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কামরুল চেয়ারম্যান , বাবুল মেম্বার ও খাজা মিয়ার নেতৃত্বে লোকজন আমাদের গ্রামে আক্রমণ করে বাড়িঘর ভাংচুর করে। এতে বাধাদিতে গেলে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

এদিকে ভাষানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওমরাবাদ গ্রামের মো. কামরুল ইসলাম বলেন, শনিবার আমি পরিষদে টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলাম। এমন সময় দেখি, গতকালের ঘটনায় কাশিপুর গ্রামের শতেক ছেলেপুলে লাঠিসোঁটা ও কাঁচের বোতল নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসছে। তখন পুলিশের সহায়তায় তাদেরকে চলে যেতে বলি। কাউকে আক্রমণ করার প্রশ্নই ওঠে না।

হোমনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, ওমরাবাদ গ্রামের একজন সিএনজি অটো রিকশা চালক কাশিপুর বাজারে গিয়েছিল। বার বার হর্ন বাজালে কাশিপুরের কয়েকজন লোক বিরক্ত হলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডায় হয়। এরই জের ধরে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হোমনা, তিতাস, মুরাদগনর, মেঘনা থানা, কুমিল্লা থেকে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।