১০ বছরে নেই আস্তর, ৩০ বছরে পরিত্যক্ত 

কুমিল্লার সরকারি ভবন 

inside post

আবু সুফিয়ান রাসেল।। 

কোটি টাকার সরকারি ভবন। ১০ বছর না যেতেই খসে পড়ছে দালানের আস্তর। ২০ বছর ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বি-তলা ভবন। আর ত্রিশ বছর ব্যবহার না করে, ব্যবহারের অনুপযোগী ভিক্টোরিয়ার ছাত্রী হোস্টেলের ভবন। কম বাজেটে কাজ, ওয়াটার টেবিল স্থাপন বা মাটি পরীক্ষায় ভুল থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২০ এপ্রিল ২০১৩ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। সে সময় একটি বহুতল ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কয়েকধাপে ভবনটি আটতলা করা হয়েছে। বর্তমানে এ ভবনটি কয়েকটি স্থানে আস্তর খসে পড়তে দেখা গেছে।

১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ নবাব ফয়জুন্নেসা ছাত্রীনিবাস। তিন থেকে চারবছর পর নির্মাণ করা হয় তিনতলা বিশিষ্ট ২নং ভবন। এ ভবনটিতে অর্ধশতাধিক ছাত্রী আবাসিক থাকতেন। চলতি বছরের মে মাস থেকে এ ভবনে আর ছাত্রীরা থাকেন না।

 ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয়েছে চম্পকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা একটি ভবন। ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দ্বিতীয় তলার কাজের উদ্বোধন করেছেন। পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট এ ভবনটি সরকারি ভাবে ২০১২ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

চম্পকনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনন্দা চক্রবর্তী ও সিনিয়র শিক্ষক মাহিনূর আক্তার জানান, এ ভবনটি এর আগে ভেঙ্গে পড়েছিলো। ২০১২ সালে ভবনটি সরকারিভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ক্লাস রুম না থাকায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানে ক্লাস নিয়েছি। এখনও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলে। নতুনভাবে মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্ল্যান হয়েছে, এটা ভেঙ্গে বহুতল ভবন করা হবে। নিচতলা নির্মাণের ২১ বছর, দ্বিতীয় তলা নির্মাণ পাঁচ বছর পর কেনো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে?  এমন প্রশ্নে এ বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক মাহিনূর আক্তার বলেন, পরের কাজটি (দ্বিতীয় তলা) নির্মাণ করা হয়েছে ফাউন্ডেশন ছাড়া। এ কাজটি করেছে ২০০৪ সালে এলজিইডি পুনঃসংষ্কার করেছে।

সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জামাল হোসেন বলেন, পূর্বেই ভবনটি পরিত্যক্ত করা হয়েছে। এটার বেহাল অবস্থার কারণ আমার জানা নেই।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ নবাব ফয়জুন্নেসা ছাত্রীনিবাসের তত্বাবধায়ক রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা জানান, ১৯৯০ সালে মেয়েদের হল নির্মাণ হয়। তিন-চার বছর পর তিনতলা বিশিষ্ট নং ভবন নির্মাণ হয়। পঞ্চাশের বেশি মেয়ে এখানে থাকতো। এবছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় মোখার সময়ে নিরাপত্তার জন্য মেয়েদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এভবনে এখন কোন ছাত্রী থাকে না। তবে অফিসিয়ালি ভবনটি এখনও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। আমরা শিক্ষা প্রকৌশলবিদের দেখিয়েছি, তারা সিদ্ধান্ত দিবেন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী ইমামকে একাধিক কল দিয়েও ফোনে পাওয়া যায়নি ।

মাত্র ১০ বছরে নতুন ভবনের আস্তর পড়ে যাচ্ছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। এ প্রতিষ্ঠানের তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন নতুন ভবনটির দেয়াল অনেক দুর্বল। বৈদ্যুতিক কাজ, মেশিনারিজ প্রবেশের কাজ করতে হয় সাবধানে। দেয়ালে ড্রিল মেশিনে দিলে পাটলের তৈরি হয়।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, ভবন তৈরি করে তারা টাকা নিয়ে যায়। সংষ্কার করার কথা গণপূর্ত বিভাগের। তাদের বারবার বলার পরও কাজ হয় না। যখন কাজ করে, গোঁজামিল দিয়ে চলে যায়।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর রাসেদুল করিম বলেন, যখন ঠিকাদার নির্মাণ কাজ শেষ করেন,

চুক্তি হিসাবে পরের একবছর কোন সংস্কার কাজ সে প্রতিষ্ঠান করে দিবে। উদ্বোধনের ১০ বছর পর যে সমস্যা এটি ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান যদি চাহিদা দেয়, আমরা সংষ্কার করে দিবো। নির্মাণের অল্প সময় এ কাজ লাগার কারণ হলো কোথাও লিকেজ আছে। অথবা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি।

গণপূর্ত অধিদপ্তর অবসরপ্রাপ্ত তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রুহুল আমিন পাটোয়ারী বলেন, গণপূর্ত কোন ভবন তৈরি করলে শতবছরের গ্যারান্টি নিয়ে কাজ করে। বর্তমান বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট তাদের বাজেট ও পলিসি ভিন্নভিন্ন। ভিক্টোরিয়ার মেয়েদের হল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে হয়তো ওয়াটার টেবিল স্থাপন বা মাটি পরীক্ষায় ভুল থাকতে পারে। বর্তমানে সরকারি কাজের প্রবণতা হলো কম বাজেটের কাজ। দু’টি ভবনের বাজেটে তিন বা চারটি ভবন একই অবকাঠামোতে করা হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যদি সহযোগিতা না করেন নির্মাণ কাজ ভালো হয় না।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কাগজপত্র দেখে বিস্তারিত বলতে পারবো।

আরো পড়ুন