১২৭ বছরের সেই মোখলেছের থেমে যাওয়া

 

পায়ে হেঁটে যেতেন মসজিদে
খেতেন পৌনে এক কেজি চাউলের ভাত

মহিউদ্দিন মোল্লা ।।
মোখলেছুর রহমান। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মনপাল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি দাবি করেছিলেন তার বয়স ১২৭বছর। ১৩১৮বাংলা সালে তার বয়স ছিলো ১৫বছর। গ্রামে তার সমসাময়িক কেউ বেঁচে নেই। তার বন্ধু-সহপাঠীরা মারা গেছেন ৪৫/৫০ বছর আগে। দিনমজুর ও রিকশা চালিয়ে জীবন নির্বাহ করা মোখলেছুর রহমানের লেখাপড়া নেই। গত ১৪আগস্ট তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তিনি পায়ে হেঁটে মসজিদে যান। তাকে নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন,আমোদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো। তার সহযোগিতায় অনেকে এগিয়ে এসেছিলেন।
তার নাতি ফয়সাল আহমেদ রাসেল জানান,মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগেও তার স্বাভাবিক চলাফেরা ছিলো। শেষ দিকে বিছানায় পড়ে যান। খাবার বন্ধ হয়ে যায়।


মৃত্যুর আগে তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার স্মৃতি শক্তি প্রখর। বৃটিশ,পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নানা ঘটনা প্রবাহ তার মুখস্ত। তিন শতকের ইতিহাস ধারণ করছেন তার শরীরের ভাঁজ পড়া মোটা চামড়ায়। বাল্য শিক্ষা বইয়ে দেখেছেন রানীর ছবি। মাথায় মুকুট। বৃটিশের রানী হয়েছে ওটা তো সেদিনের কথা। তিনি সম্ভবত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের(১৯৫২-২০২২) কথা বলেছেন।
মোখলেছুর রহমান জানান, কাজ করেছি। খেয়েছি। ছেলে-মেয়েকে খাইয়েছি। টাকা জমিয়ে জমি কিনিনি। এখন খেতে পারিনা। এক সময় একবেলায় আধা কেজি থেকে পৌনে একজি চাউলের ভাত খেয়েছি। আমার থেকে বেশি বয়সের মানুষ আশপাশের ২০ গ্রামেও নেই। তার বাবা আকর উদ্দিন ৭৫বছর ও মা জোবেদা খাতুন ১৫০বছর বয়সে মারা যান। কয়েক বছর আগে তার স্ত্রী রহিমা খাতুন ৭৫বছর বয়সে মারা গেছেন। ৩ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে ২জন ছেলে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, দেশে এক সময় খুব অভাব ছিলো। গ্রামের রাস্তাঘাট ছিলো না। টিভি রেডিও ছিলোনা। বর্ষায় গ্রাম থেকে নৌকা ছাড়া বের হওয়া যেতো না। গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে সন্ধ্যায় পুঁথি পাঠ ও জারি গানের আসর বসতো। সারা দিন কাজ করে এক আনা পেতেন। তখন চাউল সোয়া সের ছিলো ৩আনা। গ্রামে আর্থিক অবস্থা ভালো শুধু হাজী বাড়ির ও মোল্লা বাড়ির লোকজনের। লেখাপড়া ছিলো হাজী আবদুল জব্বার ও মোল্লা মনিরুদ্দিন মুন্সীর। দেশে মানুষের দিন বদল হয়েছে ইরি(বোরো) ধান আসার পর। ক্ষুধার কষ্ট কমেছে।
সদ্য প্রয়াত ৮০ বছরের ঈমান আলী মোল্লা বলেন,মোখলেছ ভাই আমাদের অনেক বড়। তাকে আমরা ছোট বেলায়ও এমন দেখেছি। তিনি শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। প্রচুর খেতে পারতেন। তার মতো বেশি বয়সী মানুষ ১০গ্রামেও নেই।
গ্রামের বাসিন্দা উত্তরদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মাসুদুল হক বলেন,মোখলেছুর রহমান ভালো মনের মানুষ। তার গায়ে প্রচুর শক্তি থাকলেও কখনও শক্তির অপব্যবহার করেননি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার সদ্য সাবেক উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন,সোয়া সের চাউল ৩আনা দাম, সেটা সম্ভবত বৃটিশের শেষ দিকে ছিলো। এছাড়া দেশে ১৯৬২ সালে ফিলিপাইন থেকে উচ্চ ফলনশীল ইরি ধান আনেন ড. আখতার হামিদ খান।