পয়াতের জলায় ২০ বছর পর আউশ ফসলের হাসি
অফিস রিপোর্টার।।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সেই পয়াতের জলায় ২০বছর পর এবার আউশ ধানের সোনালি হাসি দেখা গেছে। চলতি বছরের প্রথম দিকে ওই এলাকায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) উদ্যোগে খাল খনন করা। এতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দেয়।
এদিকে পয়াতের জলার মাঠে লাগানো বিনা-১৯ ধান সম্প্রসারণ উপলক্ষে মঙ্গলবার স্থানীয় ফকির বাজারে কৃষকদেও নিয়ে মাঠ দিবসের আয়োজন ও ফসলের মাঠ পরিদর্শন করা হয়। এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি ছিলেন,বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের(বিনা) মহাপরিচালক ড.মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম। মাঠ দিবসে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, বিএডিসি কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং বুড়িচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. আফরিনা আক্তার। সভাতিত্ব করেন বিনা কুমিল্লা উপ-কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান।
সূত্রমতে,কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার সদর, বাকশীমুল,ষোলনল ও রাজাপুর ইউনিয়নের একটি বিশাল অংশ নিয়ে পয়াতের জলা। জলাবদ্ধতা সেই এলাকার কৃষি ও কৃষকের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এই কারণে পয়াতের জলার ১২ হাজার একর আবাদী জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যার প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী ৫০০০ এর অধিক কৃষক পরিবার। পয়াতের জলার কৃষকরা রোপা-আমন ধান লাগাতে পারেন না। আবার কিছু কৃষক বোরো ধান আবাদ করলেও আগাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তা ঘরে তুলতে পারেন না। চলতি বছরের শুরুতে মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে জলার চারপাশের খালের ২৫ কি.মি. খাল পুনঃখনন কাজ করা হচ্ছে। ১৮ কি.মি. এর বেশি খাল পুনঃখননের কাজ শেষ হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাঠে সোনালি ফসল বাতাসে দোল খাচ্ছে। কোথাও কৃষক ধান কাটছেন। মাঠে ধানে মিষ্টি গন্ধ বাতাসে ভাসছে। খালে স্থানীয়রা মাছ ধরছেন।
হরিপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন মাস্টার বলেন, খাল খননের ফলে মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। জমিতে ফসল হচ্ছে। খালে মাছ ধরতে পারছে। খালের পাড়ে চলাচলের পথ হয়েছে। সেখানে বিএডিসি কাঠ ও ফল গাছ লাগিয়েছে। তা পুষ্টি পূরণের সাথে কৃষককে ছায়া দিবে।
বুড়িচং সদর দক্ষিপাড়া এলাকার কৃষক মমিন হোসেন জানান, জলাবদ্ধতার কারণে আমরা আগে এক ফসলও ঠিক মতো করতে পারতাম না। খাল খননের কারণে জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এবার আউশ ফসল করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি।
মাঠ পরিদর্শনে গিয়ে বিএডিসি কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, পয়াতের জলায় ২০ বছর জলাবদ্ধতা ছিলো। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড.আবদুর রাজ্জাক ও প্রয়াত এমপি আবদুল মতিন খসরু স্যারের নিকট সুপারিশ করা হয়। তাদেও পরামর্শে এইখানে খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়। খাল খননে জলাবদ্ধতা দূর হয়ে যায়। আগে এখানে আউশ ধান চাষ করা যেতো না। এবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিনার উদ্যোগে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। এখানে ভালো ফলন হয়েছে। এতে দেশের খাদ্য উৎপাদন বাড়বে।
বিনা কুমিল্লা উপ-কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে আউশ ধান হতো না। এবার আমরা বিনা-১৯ ও বিনা -২১ চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি। আশা করি এক সময় এই জলার ১২হাজার একর জমিতেই আউশ ধানের চাষ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন এই জলায় আউশ ধান হতো না। কখনও আমন ধানও নষ্ট হয়ে যেত। শুধু বোরো করতে পারতো। এই জলা এক সময় অভিশাপের মতো ছিলো। বিএডিসি খাল খনন করায় জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এবার আউশ মৌসুমের বিনার উন্নতজাতের ধান আমরা আবাদ করেছি। যেই ফলন হয়েছে তা বোরো মৌসুমের কাছাকাছি ফলন পেয়েছি।