জোয়ার শুরু হলে বাঁধ ভেঙে যায় –মাহমুদ চৌধুরী
এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
এখন ১৪৪ ধারা দিয়েও লাভ হবে না। ধারার সময় শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্য জায়গার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও ধারা কাজ হয়নি। জোয়ার শুরু হলে বাঁধ দিয়ে রাখা যায় না, বাঁধ ভেঙে যায়। দেশের মানুষের মাঝে জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। ইসি পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা শুরুটি আগামী নির্বাচনে ভোট চুরি প্রক্রিয়ার একটি অংশ। কিন্তু দেশের মানুষ নিবিড়ভাবে ভোটচোরদের পর্যবেক্ষণ করছে। শনিবার (৮ জানুয়ারি) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার প্রাঙ্গনে বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশকে ঘিরে পৌর এলাকাজুড়ে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় পৌর এলাকার বাইরে সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের বটতলী বাজারে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি যে আলোচনা শুরু করছেন- সেটি আগামী নির্বাচনে ভোট চুরির প্রক্রিয়ারই একটি অংশ। তিনি আরো বলেন, আর কোথাও ১৪৪ ধারা দিয়ে লাভ হবে না। ধারার সময় শেষ হয়ে গেছে। দেশের অন্যান্য জায়গার মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও ধারা কাজ হয়নি। জোয়ার শুরু হলে বাঁধ দিয়ে রাখা যায় না, বাঁধ ভেঙে যায়। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন নাকি আলোচনা শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আলোচনা শুরু করেছেন। কীসের আলোচনা? যারা ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ তে ভোট চুরি করেছে- সেই চক্র আগামী নির্বাচন কিভাবে ভোট চুরি করবে, সেই আলোচনা চলছে। এই আলোচনাটা মূলত আগামী নির্বাচনের ভোট চুরির প্রক্রিয়ার অংশ। দেশের মানুষ নিবিড়ভাবে ভোট চোরদের পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি বলেন, চোরদের বলতে চাই-সেই পথ থেকে সরে আসুন। বাংলাদেশ জেগে উঠেছে। ভোট চোর ধরতে হবে। যেখানেই এই চোরদের দেখবেন-জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। এদের বলবেন তুই চোর- ভোটচোর। এদেরকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁকে উন্নত চিকিৎসার্থে বিদেশে যেতে দেওয়ার দাবীতে এ সমাবেশের আয়োজন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এম.পি বলেন, বেগম জিয়া কারাগারে হেঁটে গেছেন। এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না। এর দায় সরকারকে নিতে হবে। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের। জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এম.পি, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ এ.কে. একরামুজ্জামান সুখন প্রমুখ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার এলাকায় মহা সমাবেশ আহবান করেছিলো বিএনপি। এজন্য মৌখিক অনুমতিও পায় প্রশাসনের। এর মধ্যে জেলা ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র সমাবেশ আহবান করে একই এলাকায়।বিএনপির এই মহাসমাবেশকে ঘিরে শুক্রবার থেকেই শহরজুড়ে উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। শুক্রবার রতে ১৪৪ ধারা জারির পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যত একরকম অচল হয়ে পড়ে। তবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই শেষতক অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির সমাবেশ। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেয় নেতাকর্মীরা। তবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এরই মধ্যদিয়ে অবসান হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার।
শনিবার দুপুরে একই স্থানে দু’টি সংগঠনের সমাবেশ আহবান করায় উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হায়াত-উদ্-দৌলা খাঁন স্বাক্ষরিত এক পত্রে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এর আগেই জেলা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জিল্লুর রহমান, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন, ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে ছয় শতাধিক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় শহরের ৫২টি পয়েন্টে। জেলার আভ্যন্তরীন গণ পরিবহন বন্ধ থাকে। সকাল থেকেই পৈরতলা বাসস্ট্যাণ্ডসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকে। শহরের ভাদুঘর পৌর বাস টার্মিনাল থেকেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি বাস কাউন্টারের কর্মকর্তারা জানান, ভোরে কাউন্টারগুলো খোলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর এসে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউন্টার বন্ধ রাখতে বলা হয়। এতে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। ফুলবাড়িয়া কনভেনশন সেন্টার এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এদিকে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার গাড়ি সমাবেশস্থলে আসার আগে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ এলাকায় আটকে দেয় পুলিশ। টোল প্লাজা এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে রুমিন ফারহানা এম.পি স্থানীয় উজানভাটি হোটেলে অবস্থান নেন। সেখান থেকে প্রায় দুই ঘন্টা পর তারা সমাবেশস্থলে রওয়ানা হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশের প্রস্তুতি চলতে থাকে। শহরতলীর ঘাটুরা, মীরহাটি ও বটতলী এলাকায় পৃথক দু’টি স্থান নির্বাচন করে কর্মীরা সেখানে জড়ো হতে থাকে। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা বটতলী এলাকায় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিলে দুপুর দুইটা থেকে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষ যোগ দেয়। জেলার নাসিরনগর, আখাউড়া, কসবা, সরাইল, বিজয়নগর, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর থেকে দলীয় কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশে যোগ দিতে আসা পথে পথে নানা ধরণের বাধা বিপত্তি মধ্যে পড়েন।