কায়সারের সম্প্রীতির কুমিল্লার ইশতেহার
অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে নতুন সম্প্রীতির কুমিল্লা গড়ার ইশতেহার ঘোষণা করেছেন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়ন প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। শনিবার নগরীর ধর্মসাগরপাড়স্থ নিজ কার্যালয়ে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। ঘোড়া প্রতীকের এই প্রার্থীর ইশতেহারে ১৬টি বিষয় তুলে আনা হয়েছ্ েতার মধ্যে আইসিটি ক্লাব স্থাপন, তথ্য প্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং, সু-শিক্ষা স্মার্ট স্কুল, ২৪ ঘণ্টা অনলাইন স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন ও বিনোদন সুবিধা বৃদ্ধি, নগরীতে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নিরাপদ ও সম্প্রীতির কুমিল্লা গড়া, সবার জন্য আবাসন, দুর্নীতি দূরীকরণ, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনা, মাদকসহ নৈতিক শক্তির পুনরুদ্ধার, নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন, খাদ্য ও নগর কৃষিতে পরিবর্তন, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তনের আশ্বাস দেওয়া হয়।
নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, মেয়র হলে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমার সর্বোচ্চ চার বছর সময় লাগবে। এসময়ের মধ্যে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে।
কায়সার বলেন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি উৎসবকে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন আমাদের মধ্যে নিবিড় ভ্রাতৃত্ববোধ সম্প্রীতি ও প্রতিবেশীদের সাথে মিলেমিশে থাকা। রাজনৈতিক সম্প্রীতিও প্রয়োজন। এজন্য আমি সকলকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
তিনি বলেন, পরিকল্পিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে গুচ্ছ আবাসন, বহুতল, বহুতল আবাসন গড়ে তোলার ছক নির্ধারণ করা হবে। দরিদ্র মানুষের আবাসন ব্যবস্থার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স ও প্ল্যান সংক্রান্ত জটিলতা, দুর্নীতি এবং নাগরিক হয়রানি বন্ধ করা হবে। এ লক্ষ্যে মোবাইল অ্যাপস ও অনলাইনের মাধ্যমে ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মানসম্মত এবং স্বল্প ভাড়ার আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। মাদকের কারণে কুমিল্লা বিপর্যস্ত। এমনকি মাদকের কারণে জনপ্রতিনিধি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। মাদক দূরীকরণে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করা হবে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা এবং তাদেরকে সাইকোলজিস্ট, মনোবৈকাল্য বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে আইসিটি ক্লাব স্থাপন করা হবে, যা একটি কেন্দ্রীয় আইসিটি হাবের আওতায় থাকবে।তথ্য প্রযুক্তি, ফ্রিল্যান্সিং ও ই-কমার্সের সাথে যুক্ত উদ্যোক্তাদেও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। রেমিট্যান্স সেবাকে সহজ করার জন্য ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করা হবে। জন্ম-মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স এবং অন্যান্য সবধরনের সেবা তাৎক্ষণিক প্রদানের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে খাল ও ড্রেনের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ করা হবে। যানজট নিরসনে আন্ডারপাস নির্মাণসহ ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। নগরীর চারদিকে বৃত্তাকার সড়ক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। পার্কিং ঠেকাতে ভবনের অনুমোদনের বিষয়ে সিটি করপোরেশন সচেষ্ট থাকবে। রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করা হবে। সড়কে সড়কে ময়লা ফেলার বাক্স স্থাপন করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতে জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি থ্রি-আর কনসেপ্টের ব্যাপকভাবে চালু করা এবং এ লক্ষ্যে উৎস নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হবে। প্লাস্টিকের ফুল নয়, নগরীকে সতেজ ফুলে ভরে তোলা হবে। বাগানিদের প্রণোদনা দেওয়া হবে। ছাদ বাগানিদের সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা হবে। তাদের পুরস্কৃত করা হবে। সিটি করপোরেশনে বছরে কমপক্ষে এক লাখ চারা রোপণ করা হবে। পুরো কুমিল্লাকে সবুজের চাদরে ঢেকে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন থেকেও খাদ্য-ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা এবং সবার জন্য ২৪ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করব। নগরীর সেরা স্কুল ও শিক্ষকদের সম্মাননা দেওয়া হবে। সদর দক্ষিণ অংশে দুটি আধুনিক শিক্ষা কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে। ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হবে। গেমতী নদীকে ঘিরে অ্যাথনিক ট্যুরিজম এবং ওয়াটার ট্যুরিজম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কোটবাড়িকে কেন্দ্র করে পর্যটন খাতকে আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে কাজ করা হবে।