আ’লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রবাসীর ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

মোহাম্মদ শরীফ

inside post

ভুয়া কাবিনে স্ত্রী হয়ে প্রবাসীর বাড়ি ও জমিসহ ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামীলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নারী নিশাত খান কুমিল্লা মহিলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। শনিবার (১জুলাই) নগরীর টমছমব্রিজ এলাকার একটি হোটেলের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই নারীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেন প্রবাসী মিনহাজুর রহমান।

ঢাকা, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েও দেশে ফিরে এখন আবাসিক হোটেল ও স্বজনদের বাড়িতে রাত কাটাতে হচ্ছে বলে জানান প্রবাসী মিনহাজ।

প্রবাসী মিনহাজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার বাড়ি নগরীর রাজাপাড়া এলাকায়। ওই এলাকার শহীদুল হক স্বপনের মাধ্যমে আইনজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচয় দেওয়া নিশাতের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই সময় তার রূপগঞ্জের জমিজমা, কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটে পাঁচ তলা বাড়ি ও ধানমন্ডির একটি ফ্ল্যাট দেখাশোনা ও ভাড়া সংগ্রহের জন্য একজন লোকের দরকার ছিল। এসময় নিশাত তাকে সাহায্য করার আগ্রহ প্রকাশ করলে মিনহাজ তাকে মৌখিক চুক্তিতে সেই দায়িত্ব দেন। মিনহাজ অভিযোগ করে বলেন, নিশাত অজ্ঞাতনামা একজনকে মিনহাজ সাজিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিবাহ দেখিয়ে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট নগরীর অশোকতলা এলাকার নারীনেত্রী ফাহমিদা জেবিনের বাসায় পরস্পর যোগসাজশে কাজী মো. জাইদুল হোসাইনের মাধ্যমে ভুয়া কাবিননামা বানায়।

বিয়ে অনুষ্ঠানের যে তারিখ বলা হচ্ছে সেই সময় মিনহাজ ইংল্যান্ডে ছিলেন বলে জানান। ওই সময় নিশাত তার (মিনহাজ) ধানমন্ডির ফ্ল্যাটখানা জোরপূর্বক দখল করে সেখানে নিশাত, তার মা, দুই সন্তান ও এক মেয়ের স্বামীসহ বসবাস শুরু করে।

মিনহাজ বলেন, এর আগে ২০১৭ নিশাত পাসপোর্টে নিজেকে মিনহাজের স্ত্রী বলে ভুয়া তথ্য দিয়ে প্রতারণার শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের এপ্রিলে মিনহাজ দেশে আসেন। এরপর তিনি নিজের ফ্ল্যাটে গেলে নিশাত, তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই তাকে সেখানে প্রবেশে বাধা প্রদান করে এবং তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর নিশাত কুমিল্লা হাউজিং এস্টেটের মিনহাজের ৫তলা বাড়ির কেয়ারটেকারকে মারধর করে একটি ফ্ল্যাট দখল করে নেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় নিশাত বাড়ির কেয়ারটেকার জিলানী ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেনকে আসামি করে মামলা করেন।

মিনহাজ বলেন, এই নারী ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য তাকে স্বামী দাবি করছে। ভুয়া নিকাহ্নামায় নিশাত নিজেকে তালাকপ্রাপ্তা বললেও তিনি তালাকপ্রাপ্তা নন, তার সন্তানাদি, মেয়ে জামাতা ও নাতি-নাতনী রয়েছে’।

তিনি বলেন, এখন বয়স্ক নিশাত তাকে আমাকে স্বামী দাবি করে বলছে, সে নিশাত রহমান ‘স্বাধীন’ নামের সন্তানের মা এবং ওই সন্তানের বাবা নাকি আমি। স্বাধীন নামের ওই শিশুর জন্ম-পরিচয় সনাক্তের জন্য ডিএনএ টেস্টের জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, নিশাত একজন প্রতারক নারী। আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। ভুয়া কাবিননামার বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে, এরই মধ্যে নিকাহ রেজিস্ট্রার ভুয়া কাবিননানা সৃষ্টির বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন এবং তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি নিশাত ও তার চক্রের দ্বারা হয়রানীর হাত থেকে মুক্তি পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেন, ভূক্তভোগী মিনহাজের বোন ফরিদা আক্তার, শাহনাজ রহমান, ভাবী মাসুদা বেগম, ভগ্নিপতি মতিউর রহমান প্রমুখ।
অভিযোগের বিষয়ে নিশাত আহম্মেদ খান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। মিনহাজুর রহমান মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করেছে, বিয়ের প্রমাণও আছে।

কুমিল্লা দক্ষিণ মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি জোবেদা খাতুন পারুল সাংবাদিকদের বলেন, নিশাত আহম্মেদ খান এ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নজনিত কর্মকাণ্ডের দায়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার ব্যক্তিগত কোনো কর্মকাণ্ডের দায়ভার দল নেবে না।

আরো পড়ুন