হলুদে রঙিন গোমতী চরের জমি
মাহফুজ নান্টু ।
দিগন্ত বিস্তৃত গোমতীর চর। চরের জমি থেকে সংগ্রহ করা হলুদ কৃষকরা রোদে শুকাতে দিয়েছেন। গেলো চৈত্র মাসে চরের জমিতে বপন করা হয়েছিলো হলুদ। ফল পরিপক্ক হয়ে গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে। এখন জমি থেকে সেই হলুদ সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। আর এমন কাজে চরে ব্যস্ত চাষিরা।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কটকবাজার সীমান্তে গোমতীর চরে হলুদ চাষ করেছেন ইউনুস মিয়া। গত কুড়ি বছর ধরে অল্প জমিতে হলুদ চাষ করেন তিনি। ছেলে ওয়াসিম উদ্দিন প্রবাসী। তবে দেশে আসলে বাবার সাথে কৃষি কাজে সহযোগিতা করেন।
গোমতীর চরে রোদে হলুদ শুকাতে দিয়ে যতœ আত্তি করছিলেন ওয়াসিম। তিনি জানালেন, তার বাবা এ বছর ৩৬ শতক জমিতে হলুদ চাষ করেছেন। ওই জমিটা অনাবাদি থাকতো। বড় বড় ঘাস জন্মেছিলো। ঝোপঝাড়ও ছিলো। এখন সেখানে হলুদ চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। ছেলের সাথে এসে যোগ দেন বাবা ইউনুস মিয়া।
হলুদ চাষের আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ইউনুস মিয়া বলেন, কাঁচা হলুদ স্বাস্থ্যর জন্য উপকারি। কাঁচা হলুদ খুচরা প্রতিকেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করি। শুকানোর পর মেশিনে ভাঙিয়ে আড়াইশ’ টাকা বিক্রি করি। এ বছর ৩৬ শতক জমিতে হলুদ চাষে ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। আশা করছি সব ব্যয় বাদে অন্তত ৪৫ হাজার টাকা মুনাফা হবে। যে জমিটাতে কিছুই হতো না সেখান থেকে বছরে ৪০-৪৫ হাজার টাকা আসছে পরিবারে। বাজার থেকে হলুদ কিনতে হয় না এখন।
গোমতীর চরের টিক্কারচর ব্রিজের পাশে পরিত্যক্ত ১৫ শতক জমিতে হলুদ চাষ করেছেন আবাদ হোসেন।
আবাদ বলেন, ১৫ শতক জমি খালি থাকতো। ৯ মাস আগে হলুদ লাগাইছি। এবারই প্রথম। মোটামুটি ভালো ফলন হইছে। এখন হলুদ সংগ্রহ করছি। ঘরের খোরাকি রেখে বাকিগুলো বিক্রি করবো। আমার আশা আছে আগামী বছর আরো বেশি জায়গায় হলুদ চাষের।
বুড়িচং উপজেলার গোমতীর চরের ভান্তি এলাকায় হোসেন মিয়া পরিত্যক্ত ১০ শতক জমিতে হলুদ চাষ করেছেন।
হোসেন মিয়া বলেন, ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শুকানোর পরে অন্তত ২৫ কেজি গুড়া হলুদ পাবেন। আড়াইশ’ টাকা করে কেজি বিক্রি করবেন। খরচ উঠে যাবে। আর যা থাকবে তা দিয়ে সারা বছরের ঘরের চাহিদা মিটবে।
গোমতীর চর ছাড়াও জেলার সদর, সদর দক্ষিণের লালমাই পাহাড়, সীমান্তবর্তী বুড়িচং উপজেলার ছোট টিলাগুলোতে হলুদ চাষ বেড়েছে।
গোমতীচরের ইউনুস মিয়া, আবাদদের মতো আরো অনেকেরই আগ্রহ তৈরি হয়েছে হলুদ চাষে। তবে কিভাবে হলুদ চাষ করতে হয়, কোন মাটিতে চাষ করলে ভালো ফলন হবে তা নিয়ে দ্বিধান্বিত কৃষকরা।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর কুমিল্লা জেলায় ১৪০ হেক্টর জমতি হলুদ চাষ হয়েছে। এছাড়া আদা চাষ হয়েছে ১৯৩ হেক্টর জমিতে।
বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, যে কোন পরিত্যক্ত জমিতে আদা ও হলুদ চাষ করা যায়। এই দুইটা ফসল খুব মূল্যবান। যে কোন মাটিতেই হলুদ চাষ করা যায়। তবে যেসব জমি পরিত্যক্ত থাকে, ঘন ঝোপ জঙ্গল আছে সেসব জমিতে হলুদ চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর পারিবারিক পুষ্টি বাগানের মত হলুদ চাষে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।