পথশিশুর গায়ে মার্জিত পোষাক-স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার!(ভিডিও)

 

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
পথশিশু। বলতেই চোখে ভাসে কিছু শিশুর মলিন মুখ। কেউ কাগজ কুড়ায়। কেউ প্লাস্টিক,লোহার ভাঙ্গা অংশ খোঁজে। মুখে অশ্লীল সব ভাষা। কুমিল্লা নগরীর এই দৃশ্য আরো করুণ। টাউন হল ও কান্দিরপাড়ের আশ-পাশের কিছু শিশু বুঝ হওয়ার আগেই মাদকে বুঁদ হন। এমন শতাধিক শিশুদের শিক্ষার আলো দেখিয়েছেন কিছু স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী। সেই অবহেলিত শিশুরা এখন বিভিন্ন স্কুলে পড়ছেন। ভালো রেজাল্ট করছেন। সেই শিশুদের মুখে এখন ভদ্রপাড়ার ভাষা। গায়ে মার্জিত পোষাক। স্বপ্ন তাদের আকাশ ছোঁয়ার। কেউ ব্যবসায়ী,কেউ শিক্ষক কেউবা চিকিৎসক হতে চান। এসব শিশুদের নিয়ে মঙ্গলবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আনন্দ আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অন্বেষণ। নগরীর একটি মিলনায়তনে এই উপলক্ষে আলোচনা,ছড়া- কবিতা আবৃত্তি,গান-নাচ,র‌্যফেল ড্র ও ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়।

অষ্টম শ্রেণীর মোবারক হোসেন,তানিয়া আক্তার ও নবম শ্রেণীর সামিয়া আক্তার বলেন, আমরা হয়তো লেখাপড়া হতো না। অন্বেষণের মামারা আমাদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কলম খাতা,পোষাক কিনে দিয়েছেন। বিভিন্ন উৎসবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান। এখন আমরা বড় স্বপ্ন দেখা শিখেছি। আমরাও একদিন সুবিধা বঞ্চিতদেও পাশে দাঁড়াবো।
সংগঠনের উপদেষ্টা মো. রুহুল আমিন ও সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ মিজান, ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র জাহিদ হাসান ছোটন পথশিশুদের প্রথম পড়ানোর উদ্যোগ নেন। তার সাথে আমরা সম্পৃক্ত হই। আমরা তখন অনার্সের ছাত্র। পথশিশুদের মাদক থেকে ফিরিয়ে পড়ায় বসানো সহজ ছিলো না। বস্তি এলাকা ও বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে শিশুদের সংগ্রহ করতে হয়েছে। প্রথমে অভিভাবকরা আমাদের বিশ্বাস করতেন না। বলতেন-পড়ে কী লাভ। ভাত পাই না খাইতে পড়ালেখা দিয়ে কী হবে? তারা ওয়ার্কসপে কাজ করলে দুটো পয়সা আয় হবে। প্রথমে টাউন হল মাঠে পড়াতাম। পরে দৌলতপুরে পড়াই। তারপরে বিভিন্ন স্কুলে তাদের ভর্তি করাই। তাদের শিক্ষা সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করি। আমাদের হাত খরচ থেকে এই সহায়তা করি। এখন আমরা অনেকে চাকরিজীবী। নিজেরা চাঁদা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াই।


সংগঠনের উপদেষ্টা কুমিল্লার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান ও সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, অন্বেষণের বন্ধুরা সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের এগিয়ে দিতে কাজ করছে। এটাই প্রকৃত ভালোবাসা। এই শিশুদের নিজেদের প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। এতে সমাজে ভারসাম্য তৈরি হবে। তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।