সুতার ভাঁজে হোমনার দুই শতাধিক নারীর জীবন সংগ্রাম

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা চান্দেরচর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের দুই শতাধিক নারী সুতা ভাঁজ করে তাদের জীবন সংগ্রাম করছেন। গ্রাম গুলো হচ্ছে, শোভারামপুর, বল্লাকান্দি, রামপুর,তালুকনগর ও মাইজচরসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম। নারীদের অধিকাংশ বয়স্ক ও বিধবা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,শোভারামপুরের একটি বাড়ির সামনে কয়েকজন নারী সারি বেঁধে চরকায় সুতা ভাঁজ করছেন। প্রতিবেদক কথা বলতে চাইলে তারা তেমন আগ্রহ দেখান না। তাদের হাত চরকার হ্যান্ডেলে আর চোখ সুতায়। যত বেশি কাজ তত বেশি টাকা। এখানের নারীদের জীবন সংগ্রাম অন্য এলাকা থেকে ভিন্ন। তারা সারা দিন কাজ করে একজনে তিন কেজি সুতা ভাঁজ করতে পারেন। প্রতি কেজি সুতা ভাঁজে তারা পান ৩০টাকা। যারা বেশি কাজ করেন তাদের সারা দিনের আয় ৯০টাকা। অন্যদের আয় আরও কম। কেউ সারা দিনে এক কেজি ও চালের টাকাও আয় করতেও হিমসিম খেতে হয়।
সত্তর বছর বয়সী মাজেদা আক্তার জানান, স্বামী ও একমাত্র ছেলে মারা গেছেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ঠিকভাবে চোখে দেখেন না। শরীরে শক্তি নেই। তারপরও সুতা ভাঁজের কাজ করেন। এক কেজি সুতা ভাঁজ করে ৩০টাকা পান। ১৫ দিনে ৩০০ টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। সাথে ছেলের বউও কাজ করে। দুইজনের আয়ে সংসার কোনোরকম টেনে নিচ্ছেন।
ওই গ্রামের বিধবা আসমা আক্তার জানান, দুই মেয়েসহ সুতা ভাঁজ করেন। তিনজনে মিলে সপ্তাহে ৫০০টাকা আয় করেন।
শোভারামপুর গ্রামের ভাঙারি ব্যবসায়ী সামছুল হক জানান, সুতা ভাঁজ করে মাইজচর গ্রামে মহাজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সারা সপ্তাহে কাজ করে মঙ্গলবার সুতা জমা দেওয়া হয়। এ গ্রামের ২০-২৫জন নারী সুতা ভাঁজের কাজ করেন। অনেক কম টাকা আয় হয়, তারপরও কেউ ভিক্ষা করেন না।
বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের হোমনা বেসিক সেন্টারের ফিল্ড সুপারভাইজার জাহিদুল হক মিন্টু বলেন, হোমনার কয়েকটি গ্রামে নারীরা কাটা সুতা চরকায় ভাঁজের কাজ করেন। সেই সুতা গুলো পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করা হয়। তাদের মজুরি অনেক কম বলে জেনেছি। তবে তাদের সহযোগিতা করার মতো আমাদের বর্তমানে কোন সুযোগ নেই।
হোমনার চান্দেরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক বলেন, সুতা ভাঁজ করে নারীরা যে টাকা পায় তা অনেক কম। এখানে অনেক বয়স্ক ও বিধবা নারী রয়েছেন। বর্তমানে বিধবা ভাতা বন্ধ রয়েছে। বয়স্ক ভাতার সংখ্যাও বাড়েনি। কেউ মারা গেলে তার স্থলে অন্যকে দেয়া হয়। ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সহযোগিতার চেষ্টা করছি।
হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন,এই নারীদের বিষয়ে আমরা খোঁজ নেবো। তাদের সহযোগিতার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।