মালয়েশিয়ায় নয় রিয়ার গন্তব্য গ্রামের কবরস্থান!
কুমিল্লার তিনজনের বাড়িতে স্বজনদের মাতম
মাহফুজ নান্টু, আবদুল্লাহ আল মারুফ।।
শুক্রবার রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। আগের দিন গিয়েছে কেনাকাটা করতে। এছাড়া তাদের এক আন্টির সাথে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে আর ফেরেনি আমার দুই মা। তার মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় মারা গেছেন, রিয়ার খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। নিমু কুমিল্লা সদর উপজেলার হাতিগড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। যাবার আগে রিয়া বলেছিলেন, বাবা আমরা তাড়াতাড়ি ফিরবো। ফিরলো লাশ হয়ে। একথা বলে কেঁদে উঠেন কোরবান আলী। তার সাথে কথা হয়, কুমিল্লার লালমাই উপজেলার চরবাড়িয়া গ্রামে।
জানা গেছে, লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকার হাজী কোরবান আলী গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। তার মেয়ে দুজন। রিয়া মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আলিশা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় মারা গেছেন, তাদের খালাতো নিমু। তারা একই সঙ্গে কেনাকাটা করতে গিয়েছিল। এসময় তারা কাচ্ছি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে যায়।
সরেজমিনে চরবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বাড়িতে প্রতিবেশিদের ভিড়। সবার চোখে পানি। নারীরা লাশের গাড়ির আশপাশে ভিড় করেছেন। কেউ লাশের গাড়ি ধরেও কাঁদছেন। বাবা কোরবান আলী ও চাচা লোকমান হোসেনও কাঁদছেন। স্বজনদের আহাজারির বেদনা ভাসছে বাতাসের গায়ে।
কোরবান আলী বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা এলাকায় এসেছিল। আজ শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে আমিসহ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কেটেছিলা। মেয়েদের উপস্থিতিতে কাকরাইলের বাসা আনন্দে ভরে থাকতো। আজ আমার ঘর শূন্য।
কাঁদতে কাঁদতে কোরবান আলী বলেন, যখন জীবিত মানুষ উদ্ধার শেষ হলো তখন আমার শরীর কাঁপছিল। আমি ঘামাচ্ছিলাম। বুকের ভেতর কেমন জানি করছিল। রাত যখন ১০ টার কাছাকাছি তখন আমাদের লাশ বুঝিয়ে দেয়া হলো। যে মেয়েকে সন্ধ্যায় হাসিখুশি বিদায় দিয়েছি রাতে তার পোড়া লাশ পেলাম। আমি আমার দুই স্বপ্নের লাশ দিয়ে বাড়ি এসেছি। বিকেলে পুকুর পাশের রেখে এসেছি আমার দুই কলিজার টুকরোকে।
কোরবান আলী অব্যবস্থাপনার উল্লেখ করে বলেন, আমরা ঢাকায় আমরা সব সময়ই আতঙ্কে থাকি। আমরা কেউ নিরাপদ নই। এক দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই নড়েচড়ে বসে। আবার কদিন পরে আগের মত হয়ে যায়। তারা কেউ তেমন পুড়ে মারা যায়নি। শ্বাসকষ্টে মারা গেছে। তারা বের হতে পারেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু ডিস লাইনের ক্যাবল, ইন্টারনেট ক্যাবল আর বৈদ্যুতিক ক্যাবলের জন্য তাদের গাড়িও ঠিক জায়গায় স্থাপন করে পানি দিতে পারেনি। ফলাফল হলো লাশের পর লাশ।