গ্রামের সবুজ সাম্রাজ্যে দেশি বিদেশি দর্শনার্থী
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
লাড়–চৌ। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই গ্রামের সবুজ সাম্রাজ্য দেখতে ছুটে আসেন দেশি বিদেশি দর্শনার্থীরা। এই সা¤্রাজ্য গড়ে তুলেছেন গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের(ঢাবি) সাবেক ছাত্র শহীদুল ইসলাম। তার সবুজের খামারে রয়েছে ফল ,মসলা,সবজি ও কাঠসহ শতাধিক প্রজাতির গাছ। রয়েছে ছোট বড় ৭টি পুকুর। পশু ও হাঁসের খামার। মোট ২৫ একর ভূমির ১৫ একরে বাড়ি,পুকুর, ফল ও সবজির জমি। বাকি ১০ একরে ধান চাষ হয়। এই খামার থেকে বছরে আয় হয় প্রায় ১০লাখ টাকা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,খামারে ঢুকতে বড় সাইনবোর্ড। ভাই ভাই সমন্বিত মৎস্য খামার। প্রবেশ সড়কের দুই পাশে কাঁঠাল গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁঠাল। কোন পুকুরে মাছের পোনা বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। কোনটিতে মাছ বড় করা হচ্ছে। বড় পুকরটির পাড়ের বাইরের অংশে লেবু গছের সারি। ভেতরের দিকে আম,কাঁঠাল,নারিকেল,পেঁপে গাছের সারি। পাড়ে রয়েছে বিশ্রামের জন্য ছাতা জাতীয় ছোট ঘর। পুকুরে বাঁধা কয়েকটি ছোট নৌকা। নৌকায় দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসেন। বাড়ির পাশের বাগানে লিচু গাছের সারি। গাছে গাছে ঝুলছে কম বয়সী লিচু। সাথে রয়েছে আম,কাঁঠাল,কলা,সফেদা,লটকন,অড়বরই,জাম্বুরাসহ দেশি বিভিন্ন ফলের গাছ। বাগাানের এক পাশে সবজি খেত। বাড়ির ভেতরে রয়েছে গরু ও হাস-মুরগির খামার।
শহীদুল ইসলাম বলেন,৫ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ২য়। তিনি ঢাবিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স করেছেন। অসুস্থতার কারণে গ্যাপ হয়ে যায়। এরই মাঝে তার চাকরি হয় প্ল্যানিং কমিশনে রিচার্সার হিসেবে। কয়েক মাস কাজ করার পর আবার অসুস্থ। পরিবারের পরামর্শে গ্রামে চলে আসেন। ১৯৯৮সালে পারিবারিক সম্পত্তিতে খামার গড়ে তোলেন। লবণ তেল ছাড়া তার বাজার থেকে আর কিছু কিনতে হয় না। নিজের বাগানের ফল সবজি,পুকুরের মাছ,খামারের গরুর দুধ রয়েছে। সেগুলো নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে পরিবারের শহরে থাকা সদস্য ও দূরের স্বজনদের মাঝেও বিতরণ করেন। মাছে ভালো লাভ পাচ্ছেন। শ্রমিক ও সার বীজের দাম বাড়ায় ধানে কম লাভ পাচ্ছেন। তাই অধিকাংশ ধানি জমি ভাড়া দিয়েছেন।
তিনি বলেন,তার এক ভাই বিদেশিদের সাথে ব্যবসা করেন। বছরের বিভিন্ন সময় বিদেশিরা বাংলাদেশের গ্রাম দেখতে এই খামারে আসেন। এছাড়া আশপাশের গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এখানে ভিড় জমান।
তিনি নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ধৈর্য্য নিয়ে পরিশ্রম করতে হবে। কাজে আনন্দ খুঁজতে হবে। তাহলে সফলতা আসবে। এই খামারের আয় দিয়ে পরিবার চালানোর সাথে নিরাপদ খাদ্য খেতে পাচ্ছেন এটা বড় আনন্দেও বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
পাশের মোগসাইর এগারগ্রাম বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. মাকসুদুর রহমান বলেন,লাড়ুচৌ গ্রামের খামারটি বড় ও দৃষ্টিনন্দন। এটি দেখতে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ আসে। আমারও ব্যক্তিগত খামার রয়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে সমন্বিত খামার গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মাসুদ রানা বলেন,কৃষি উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা নিয়মিত কাজ করছি। শহীদুল ইসলামের মতো খামারিরা কৃষির প্রাণ। কৃষি বিষয়ক যেকোন পরামর্শ দিয়ে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।
(ছবি তুলেছেন মোহাম্মদ শরীফ ও সাইফুল ইসলাম সুমন।)