‘চাষী’ কবির পরিবারের খোঁজে

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,/দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।/কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরানীর লিখিত চাষী কবিতার অংশ বিশেষ। তার স্বামী কুমিল্লা সুয়াগাজীর জমিদার আশরাফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। রাজিয়া থাকুন চৌধুরীরানীর কাজকে আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার দাবি তার পরিবার ও সাহিত্যানুরাগীদের।

মেয়ে রাবেয়া চৌধুরী

বিভিন্ন সূত্রমতে,কবি রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী ১৯০৭ সালে নোয়াখালী জেলার হরিরামপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বেড়ে উঠেন কলকাতায়। বাবা আবদুর রশিদ খান ছিলেন কলকাতা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র। ১৯৩৪ সালে রাজিয়া খাতুন চৌধুরানী মারা যান। তিনি অনেক কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর গল্পগ্রন্থ “পথের কাহিনী ও কাব্যগ্রন্থ “উপহার”। এগুলো ছাড়া অন্য লেখা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়নি। তার স্বামী কুমিল্লা সুয়াগাজীর জমিদার আশরাফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। আশরাফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ছিলেন বেংগল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন সভাপতি। দেশ ভাগের পর আশরাফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী যুক্তফ্রন্টের আবু হোসেন মন্ত্রী সভায় শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানেই বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমীতে রুপান্তর করা হয়। তাদের ৩মেয়ে এক ছেলের মধ্যে জীবিত আছেন রাবেয়া চৌধুরী। রাবেয়া চৌধুরী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য। ৯০এর বেশি বয়সের রাবেয়া চৌধুরী চার বছর বয়সে মাকে হারান। চার দশকের রাজনীতি ও চারবারের সংসদ সদস্য হয়েও তার কোন গাড়ি বাড়ি নেই।
রাবেয়া চৌধুরীর ছেলে ইমরান চৌধুরী বলেন, নানা,নানুর আদর্শ ধারণ করেছেন মা। চারবার এমপি হলেও রাজনীতির কালো পথে হাঁটেননি। আমাদেরকেও হাঁটতে দেননি। ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে জাতীয় মহিলা সংস্থা কুমিল্লার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে সবার নজর কাড়েন তিনি। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার ১৯৭৮ সালে ‘জাগদল’ গঠন করলে সাবেক মন্ত্রী ফাতেমা কবিরের সঙ্গে বেগম রাবেয়া চৌধুরীকেও বৃহত্তর কুমিল্লার যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত করেন। লায়ন ক্লাব অব কুমিল্লার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আর্তমানবতার সেবায়ও কাজ করেন। রাবেয়া চৌধরী বিয়ে করেন চাচাতো ভাই নাসির আহমেদ চৌধুরীকে।
ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন,কুমিল্লা টাউনহলে ৩০এর দশকে কৃষক সম্মেলন হয়েছিলো। সেখানে স্বামী রাজনীতিবিদ আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর অনুরোধে ‘চাষী’ কবিতাটি লিখেন। সেটি সম্মেলনের উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়েছিলো। জমিদার কন্যা ও বধূ হওয়ার পরেও তার কৃষকের জন্য মমত্ববোধ ও দরদ এই কবিতায় ফুটে উঠে। এতে প্রমাণিত হয় তিনি দরদী মনের মানুষ। তিনি অল্প বয়সে প্রয়াত হন। এতে জাতি একজন প্রতিভাবান কবিকে হারিয়েছে। রাজিয়া খাতুন চৌধুরীরানী তার যোগ্যতার মূল্যায়ন পাননি।
কুমিল্লার সুয়াগাজী সাহেব বাড়িতে কথা হয় রাবেয়া চৌধুরীর সাথে। বয়সের কারণে এখন তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় নন। তবে কথা বলে দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি তার টান লক্ষ্য করা যায়। ছাত্র জনতার বিপ্লবে স্বৈরাচার সরকারে পতন করায় তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, মা রাজিয়া খাতুন চৌধুরানীকে দেখার স্মৃতি খুব মনে নেই। একটা স্মৃতি মনে আছে। সেটা হয়তোবা জনশ্রুতি। মা তখন অসুস্থ। একটা খাটে শুয়ে আছেন। তার মাথার লম্বা চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।