বেরুলা খাল ভরাটে হুমকির মুখে তিন সহস্রাধিক একর কৃষি জমি

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
বেরুলা খাল। দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার ফতেপুর গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু। শেষ হয় নোয়াখালীর চৌমুহনী গিয়ে। শত বছরের প্রাচীন খালটি ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কোথাও খালের উপর দোকান ও বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। কোথাও আংশিক ভরাট করা হয়েছে। সম্প্রতি কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ফোরলেন নির্মাণে খালটির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার পথে রয়েছে। সড়ক বর্ধিত করতে গিয়ে এ অঞ্চলের খালটির অধিকাংশ ভরাট করা হয়েছে। কোথাও খাল ড্রেনে পরিণত হয়েছে। তবে লাকসাম পৌরসভার দক্ষিণে বাতাবাড়িয়া ও ভাটিয়াভিটায় পুরো খাল ভরাট করে ফেলা হয়েছে। এতে এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। সেচ সংকটে পড়বে কৃষি জমি। প্রাকৃতিক মাছের উৎস নষ্ট হবে। খাল ভরাটে ধ্বংস হবে কুমিল্লা জেলার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জ উপজেলার তিন সহ¯্রাধিক একর কৃষি জমি।
স্থানীয় সূত্রমতে,এই খালটি দিয়ে নোয়াখালী থেকে নৌকা যোগে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে মালামাল বহন করা হতো। পাল তোলা নৌকায় বসে মাঝি কণ্ঠে সুরের মায়াজাল বুনতেন। খাল থেকে পানি নিতে আসা গাঁয়ের বধূ ঘোমটা টেনে কান খাড়া করে শুনতেন সেই গান। দখলে এবং অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণে খালের নৌ-পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে টলটলে পানিতে মাছ শিকার করে সংসার চালাতেন স্থানীয় জেলেরা। খননের অভাবে সেই খাল এখন ড্রেন হয়ে গেছে। এখন ফোরলেন করতে গিয়ে খাল ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। আগামী বছর ফসল উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত কৃষক। সড়কের পশ্চিম পাশে জায়গা থাকলেও উচ্ছেদ এবং প্রভাবশালীদের কারণে উপকারী খাল ভরাট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই খালের সাথে সংযোগ রয়েছে কুমিল্লার লাকসাম,মনোহরগঞ্জ,নাঙ্গলকোট,নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জের বিভিন্ন শাখা খালের। বেরুলা খাল ভরাট হলে প্রবল জলাবদ্ধতার কবলে পড়বে লাকসাম উপজেলার উত্তরদা, আজগরা, মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা,নাথেরপেটুয়া,বিপুলাসার ও নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,১৯৭৮সালের দিকে খালটি স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে সংস্কার করা হয়। খালটি দিয়ে নোয়াখালী থেকে নৌকা যোগে লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজারে মালামাল আনা-নেয়া করা হতো। খালটি ভরাট হয়ে গেলে এই অঞ্চলের মানুষ জলাদ্ধতার কবলে পড়বে। কৃষি জমি পড়বে সেচ সংকটে।
লাকসামের প্রবীণ সাংবাদিক মজিবুর রহমান দুলাল বলেন,খালের ভূমি কার সেটি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে ভূমি যারই হোক তা ভরাট করা যাবে না। এতে মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।
লাকসাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম সাইফুল আলম বলেন,যতটুকু জেনেছি খালের মালিকানা সড়ক ও জনপদ বিভাগের। সেখানে খাল ভরাট করে তারা ফোরলেনের কাজ করছেন। এনিয়ে আমার কিছু বলার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি সেচ) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন,কৃষিকে বাঁচাতে প্রবাহমান খালের বিকল্প নেই। বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন,খাল ভরাট করা বেআইনি। সেটা যে সংস্থাই করুক। পরিবেশ,প্রকৃতি ও কৃষিকে বাঁচাতে নদী- খাল রক্ষা করতে হবে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন,খাল ভরাটের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। প্রয়োজনে খাল ভরাট করেই কাজ করতে হবে।

inside post
আরো পড়ুন