শত বছরে নামাজ পড়েন জামাতে ,কোরআন তেলোয়াত খালি চোখে!
মহিউদ্দিন মোল্লা।।
সৈয়দ সফিকুর রহমান। বয়স প্রায় শত বছর। কখনও বাস ট্রেন চড়েননি-যাননি ঢাকা! প্রথমদিকে তিনি গ্রামে নির্মিত ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটতেন না। রিকশায় ওঠতেন না। তার ধারণা তিনি উঠলে সেটা ভেঙে পড়বে। এখনও ৫ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে পড়েন। বয়সের ভারে কুঁজো হলেও চোখে ভালো দেখেন। কোরআন পড়েন খালি চোখে। কানে একটু কম শোনেন। তবে স্মৃতি শক্তি টনটনে।
সৈয়দ সফিকুর রহমান কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সাকছি গ্রামের বাসিন্দা। ৫ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ৪র্থ। তার ভাই বোনের মধ্যে কেউ বেঁচে নেই। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,আছরের আজান পড়েছে। লাঠি ভর দিয়ে মসজিদে রওয়ানা করেন সৈয়দ সফিকুর রহমান। লাঠির ঠক ঠক শব্দ তুলে যাচ্ছেন। কয়েক গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তিকে দেখে কেউ সালাম দেন কেউ এগিয়ে গিয়ে দোয়া চান। তিনি তাদের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন। মসজিদে গিয়ে সবার সাথে দাঁড়িয়ে ফরজ নামাজ আদায় করেন।
প্রতিবেশী নাতি ব্যবসায়ী আবদুল কাদের খোকন বলেন,তিনি সরল মানুষ। কখনও বাস ট্রেন চড়েননি-যাননি ঢাকা! প্রথমদিকে তিনি গ্রামের ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটতেন না। রিকশায় ওঠতেন না। তার ধারণা তিনি উঠলে সেটা ভেঙে পড়বে। এখন অবশ্য ভয় কমেছে। একবার আমরা দুইজনে ধরে কুমিল্লায় ডাক্তার দেখাতে তাকে নিয়ে গেছি। তিনি রিকশায় বসে বলেন,‘কিরে গাছ কা হিছনের দিকে চলি যায়ের!’ পাশের গ্রামে বিয়ে দাওয়াত দিলে তিনি মাইক্রোবাসে না উঠে সকালে হেঁটে চলে যেতেন।
সৈয়দ সফিকুর রহমানের ৬০ঊর্ধ্ব বয়সের ভাতিজা প্রকৌশলী সৈয়দ নিজাম উদ্দিন বলেন, আমার কাকার বয়স প্রায় শত বছর। তার মতো এত বয়স আমাদের এলাকার কেউ পায়নি। তিনি চা দোকানে আড্ডা, মানুষের গীবত করা পছন্দ করেন না। নিজের জমিতে কাজ আর ইবাদত নিয়ে পড়ে থাকেন।
প্রতিবেশী সৈয়দ বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সৈয়দ মকবুল আহামেদ বলেন,তিনি সরল জীবন যাপন করেছেন। তাকে সবাই শ্রদ্ধা করেন। মানুষের বিভিন্ন সমস্যায় তিনি দোয়া পড়ে ফু দেন। তাতে মানুষের উপকারও হয়।
সৈয়দ সফিকুর রহমান বলেন,তিনি কৃষি কাজ করে পরিবার চালিয়েছেন। পরিমিত খাবার খেয়েছেন। পাশের গ্রামের মাদ্রাসায় আলিম(উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যন্ত পড়েছেন। খুব প্রয়োজন না হলে কুমিল্লা জেলা সদরে যাননি। রাজধানী ঢাকা কখনও যাননি। বাসে ও ব্রিজে কেন উঠেননি এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি কম দাঁতের ফাঁক দিয়েও ঠা ঠা শব্দ তুলে হেসে উঠেন। হাসির শব্দ বাতাসে মিলানোর আগে পাশে থাকা তার এক নাতি বলে উঠেন-এখন দাদা শরম পাইছে,তাই কিছু বলতে চান না!