শীঘ্রই টাউনহলের সংস্কার,বরাদ্দ সোয়া ৩ কোটি

মোতাহার হোসেন মাহবুব।।

inside post

ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ করে কুমিল্লা মহানগরের কেন্দ্রবিন্দু কান্দিরপাড়ে বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের(টাউন হল মিলনায়তন) অবস্থান। ফ্রান্সিস হেনরী স্ক্রাইন-ই সর্বপ্রথম টাউন হল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে মহারাজা মানিক্য বাহাদুরকে চিঠি লিখেন। এরই আলোকে ১৮৮৫ সালে ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এটি সংস্কার হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার বলেছেন, খুব শীঘ্রই কুমিল্লা টাউন হল ও টাউন হল মাঠের সংস্কার কাজ শুরু হবে। এ কাজের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা আমাদের হাতে এসেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াও শীঘ্রই শুরু হবে।
তিনি আরও বলেছেন, আমি জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে এ টাকা সংগ্রহ করেছি। জেলা পরিষদের মাধ্যমে কবরস্থানের উন্নয়ন বা এ ধরনের ছোটখাটো উন্নয়নের জন্য ছোটখাটো বরাদ্দ পাওয়া যেত। আমি কুমিল্লা টাউন হলের সংস্কারের জন্য জেলা পরিষদ বরাবর এ টাকা সংগ্রহ করেছি। সংস্কার কাজের জন্য খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের সরকারি মাধ্যমিক প্রকৌশলী শিবু প্রসাদ বসু একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। এ পরিকল্পনার উপর বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের আয়োজনে গত ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার ‘কুমিল্লা টাউন হলের সংস্কার বিষয়ে সুধী সমাজের সাথে মতবিনিময়’ শীর্ষক এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার। কুমিল্লা টাউন হলের সদস্য সচিব সাজ্জাদুল কবীরের উপস্থাপনায় এ সভার শুরুতে টাউন হল কার্যকরী পরিষদের সভাপতি মোঃ আমিরুল কায়ছার বলেন, কুমিল্লা টাউন হলের সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ প্রকল্প এখন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। এটি বাস্তবায়নে একটি এডহক কমিটি কাজ করছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী টাউন হলের নির্বাচন সম্পন্ন হলে নির্বাচিত কমিটি টাউন হলের সম্পদ ব্যবহারযোগ্য করতে আরও বেশি তৎপর হবে। প্রকল্পটি ভিডিও স্ক্রীপ্টের মাধ্যমে উপস্থাপনের পর প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম। তিনি কুমিল্লা টাউন মার্কেট দখলমুক্ত করে টাউন হলের আওতাধীন করার জন্য জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছারকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে কুমিল্লা টাউন হলের সংস্কারের জন্য যে বরাদ্দ এনেছেন তারজন্যও ধন্যবাদ জানান। প্রকল্পে প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে দেয়াল ঘেষে একটি মঞ্চ নির্মাণের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন না করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, টাউন হল মাঠে যারা প্রবেশ করেন তারা উত্তরমুখী হয়ে প্রবেশ করেন। মঞ্চটি মাঠের দক্ষিণ পাশে নির্মাণ করা হলে তা জনগণের জন্য বিপরীতমুখী হয়ে যাবে। তিনি টাউন হলের মূল মিলনায়তনটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের প্রস্তাব করেন।
পরিকল্পনা উপস্থাপনকালে প্রকৌশলী শিবু প্রসাদ বসু বলেন, লোকসমাগমের কথা বিবেচনা করেন নতুন আরেকটি মঞ্চ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া মাঠের তিন পাশে ওয়াকওয়ে থাকছে। বিশেষ করে কুমিল্লা ক্লাবে প্রবেশের জন্য ক্লাবের সদস্য ও জনগণ পূর্বপাশের ওয়াকওয়েটি ব্যবহার করলে পুরো মাঠটিতেই জনগণ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবে।
সাংবাদিক গাজীউল হক সোহাগ বলেন, যেভাবে অবকাঠামোগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, এতে মাঠের খোলামেলা পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে।
বক্তব্য রাখেন আইনজীবী গোলাম ফারুক, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আবু রায়হান, সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার কাজ করা হবে।
বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তনের সংস্কার কাজ নতুন ঘটনা না। এর আগেও অনেকবার ছোটবড় সংস্কার কাজ হয়েছে। এরমধ্যে ২০০০ সালে ১২ জুলাই জিল্লুর রহমান এমপি সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন। ২০০২ সালে ৫ এপ্রিল মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেন সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেন। একই সালে ১৫ এপ্রিল কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন চৌধুরী সীমানা প্রাচীর কাজের উদ্বোধন করেন। কুমিল্লা টাউন হল মিলনায়তনের সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়নে রূপ দেয়া, টাউন হলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে ৮৮ লাখ ১৫ হাজার ৩শ ৪৭ টাকা ব্যয় করা হয়। এছাড়া এনসিসি ব্যাংকের সহযোগিতা সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ করা হয়।
১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ট্রান্সফরমার নির্মাণ করা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে। সচেতন কুমিল্লাবাসীদের অনেকে বলেছেন, কুমিল্লা টাউন হল মার্কেট-যা বাহার মার্কেট নামে পরিচিত ছিল তা জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার দখলমুক্ত করেছেন। এখন থেকে এ মার্কেটের আয় প্রতিমাসে ১০ লাখ টাকা কুমিল্লা টাউন হলের ফান্ডে জমা হবে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছার কুমিল্লাবাসীর নিকট প্রশংসিত হয়েছেন। টাউন হলের সংস্কার কাজেও তাঁর ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।

আরো পড়ুন