লালমাই পাহাড়ে জেগে উঠছে আরেক শালবন বিহার

মহিউদ্দিন মোল্লা।।
১৩শ’ বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান কুমিল্লার শালবন বিহার। শালবন বিহারের মতো আরেকটি প্রত্ন স্থাপনা জেগে উঠছে কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে। শালবিহার থেকে ১২কিলোমিটার দূরে লালমাই পাহাড়ের সদর দক্ষিণ উপজেলার বড় ধর্মপুরে অবস্থিত বালাগাজীর মুড়া। সেখানে এই পুরাকীর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। এই পর্যন্ত এক চতুর্থাংশ খনন কাজ হয়েছে। এই স্থানটি খনন করে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা গেলে প্রত্ন পর্যটনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
সোমবার বিকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সদর দক্ষিণ উপজেলার রতনপুর বাজার। বাজার থেকে একটু দক্ষিণে হাতের বাম পাশে বড় ধর্মপুর। পায়ে হাটা পথ গেলে মিলবে চারা বাড়ি। সেখানে প্রত্ন স্থাপনায় কাজ করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বড় বড় ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ছয় ফুট চওড়া প্রাচীন একটি দেয়ালের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে, এটা স্থাপনার কোন। খননকালে মাটিরপাত্রের টুকরো তিন চার ফুট পুরু একাধিক মাটির স্তর সরানোর পরে সন্ধান মেলে এ ধ্বংসাবশেষের। বালাগাজীর মুড়া নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে উন্মোচিত প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, ভোজ বিহার, ইটাখোলা ও রূপবান মুড়ার সমসাময়িক হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান টিম।

স্থানীয় মাসুদ রানা,মনির হোসেন, মো, শাহজাহান ও আকলিমা বেগম বলেন,‘বালাগাজীর মুড়া স্থানীয়দের কাছে চারা বাড়ি নামে সুপরিচিত। মূলত এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির উপরিভাগে প্রচুর চারা তথা মাটির পাত্রের ভাঙ্গা টুকরো থাকায় স্থানীয়ভাবে এ নামকরণ করা হয়। এটির খনন শুরুর পর তা দেখতে মানুষ ভিড় করছেন। এটি খননের পর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করলে এলাকার সুনাম বৃদ্ধি পাবে, সাথে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।’
ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, ‘বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়েছে। সম্পূর্ণ খনন ও গবেষণা কাজ সম্পন্নের পরে বিস্তারিত জানা যাবে।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে বালাগাজীর মুড়াকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৪৫ সালের শিমলা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলম মহোদয়ের নির্দেশনায় এ বছর বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।’
খনন ও অনুসন্ধান কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফিল্ড অফিসার) মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল জানান, ‘চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম দিক থেকে বালাগাজীর মুড়ায় প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হয়েছে, যা আগামী জুন মাস পর্যন্ত চলবে।’
উল্লেখ্য, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক দপ্তর, কুমিল্লার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক টিম কুমিল্লা জেলার এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছে। সাত সদস্যের খনন টিমে আরও আছেন ফিল্ড অফিসার মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম, গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক, সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা, ফটোগ্রাফার শঙ্খনীল দাশ এবং পটারী রেকর্ডার রিপন মিয়া।