ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ

‘সুপারের দাবি সবাই অবৈতনিক, ছাত্ররা বলছেন বেতন দেন’
সানোয়ার হোসেন,চৌদ্দগ্রাম।।
ভুয়া এতিম ও বেশি ছাত্র দেখিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজারিপাড়া হাফেজিয়া এতিমখানা ও নূরানী মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তরের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত এতিমরা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের ক্যাপিটেশন গ্রান্ড সুবিধা প্রাপ্তির পর থেকে ভুয়া এতিম ও অবৈতনিক ছাত্র দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের এই অভিযোগ মাদ্রাসা সুপার ও পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি হাফেজ বেলালের বিরুদ্ধে। সন্তানদেরকে এতিম দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জীবিত পিতারা।
সরজমিন ওই মাদ্রাসা ঘুরে কয়েক শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, তারা বেতন দিয়ে পড়াশোনা করছেন। তবে মাদ্রাসা সুপার দাবি করেন সবাই এতিম এবং অবৈতনিক। কাগজকলমে ছাত্র ২১৪ হলেও উপস্থিত ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে ১১৯ জন। বাকিরা কোথায় জানতে চাইলে মাদ্রাসা সুপার দাবি করেন ৯৫ জন ছুটিতে আছে। তৎক্ষণাৎ বাবুর্চি দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি প্রতিদিন ১২০ জনের রান্না করেন।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবুল হাশেম মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। যা ২০০০ সালের জানুয়ারি মাসে সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক ক্যাপিটেশন গ্রান্ড এর তালিকাভুক্ত হয়। রেজি নং ৯৫১/২০০০। শুরুতে ১০ জন এতিমের অনুকূলে ক্যাপিটেশন গ্রান্ড সুবিধা পেলেও সর্বশেষ ২০২৫ সালে অদৃশ্যবলে তা ১০২ জনে উন্নীত হয়। অথচ পুরো উপজেলায় ক্যাপিটেশন গ্রান্ড প্রাপ্ত বাকি ১৪ টি এতিমখানার সুবিধাপ্রাপ্ত ছাত্রের সংখ্যা ২৪৬ জন!
সমাজসেবা অফিস থেকে জানা যায়, প্রতি বছর প্রতি এতিম ছাত্রের জন্য ২০০০ টাকা সহায়তা দেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। চলতি বছর জুনে প্রথম ছয় মাসের প্রতি মাসে ২০০০ টাকা করে ১০২ এতিম ছাত্রের ১২ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ১০২ জনের তালিকা থেকে উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ও ফকিরহাট গ্রামের ৬ ছাত্রের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ৫ ছাত্রের পিতা জীবিত আছেন। তাদের সন্তানরা প্রত্যেক মাসের বেতন দিয়ে ওই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। এদের মধ্যে তালিকার ১১ ও ৪৭ নং ছাত্র আরিফ এবং হাসানের পিতা মো: এয়াসিনকে মৃত দেখানো হয়। তবে পরিবার বলছে এয়াসিন ওমান প্রবাসী এবং প্রতি মাসে ১৫০০ টাকা করে বেতন দেয়া হয়। গোবিন্দপুর গ্রামের তালিকার ২৭ নং ছাত্র মো: মেহেদী পিতা মো: ওহিদুর রহমান, ৩৩ নং ছাত্র মো: মারুফ পিতা মো: স্বপন, ৬৫ নং ছাত্র মো: যোবায়ের (১) পিতা মো: বোরহান উদ্দিনকে মৃত দেখালেও সবাইকে জীবিত পাওয়া যায়। এই ৬ ছাত্রের মধ্যে ৩ জন মাদ্রাসা ছেড়েছেন কয়েকবছর আগে। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এখনো তাদেরকে মাদরাসার এতিম ছাত্র দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে।
এ বিষয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা সাহিদুর রহমান বলেন, প্রতিবছর বার্ষিক প্রতিবেদনের জন্য অন্তত দুইবার মাদরাসা পরিদর্শন ও তথ্যাদি যাচাই করি। তিনি সরজমিন ঠিকঠাক পেয়েছেন বলে জানান। তখন ভুয়া ছাত্র ও ভুয়া এতিম দেখানোর প্রমাণাদির অডিও ভিডিও দেখালে তিনি স্বীকার করেন ছাত্রদের তথ্যাদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
মাদ্রাসা সুপার ও সেক্রেটারি হাফেজ বেলাল জীবিতদের মৃত দেখানোর বিষয়ে একবার বলেন কম্পিউটারে ভুল করছে, আবার বলেন মৃতের সনদ অভিভাবকরা দিয়ে গেছেন। আবার বলেন এরা দুস্থ, বেতন ছাড়া পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদরাসার সভাপতি প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়গুলো আমি অবগত নই, হাফেজ বেলালের সাথে আলাপ করে জানাবো।’

inside post
আরো পড়ুন