দেলোয়ার ও জিলানীর হত্যাকারীরা আসে মোটর সাইকেলে
আমোদ ডেস্ক।।
কুমিল্লা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ও যুবলীগ কর্মী গোলাম জিলানী হত্যার ধরন প্রায়ই একই রকম। দুইটি খুনই হয় নভেম্বর মাসে। একটি ২০১৮সালে অন্যটি চলতি বছর। দুইটি খুনের হত্যাকারীরা আসে মোটর সাইকেলে। দুইটি খুনের সাথে কাউন্সিলর নির্বাচন ও গরু বাজার দখলের আধিপত্য জড়িত। গত ১১ নভেম্বর কুমিল্লা নগরীর ২৭নং ওয়ার্ডের চৌয়ারায় মোটরসাইকেল যোগে এসে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ কর্মী গোলাম জিলানীকে।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের সামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল যোগে এসে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। দুইটি এলাকাও নিকটবর্তী। আইন শৃংখলা বাহিনীর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, দুইটি হত্যাকা-ের সাথে জড়িত নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার। যুবলীগ কর্মী গোলাম জিলানী হত্যা মামলায় কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার ২নং আসামি। এদিকে দেলোয়ার হত্যা মামলায় আনোয়ার হোসেন নামের একজনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আনোয়ার জানায় দেলায়ার হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিলো কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর সামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেল যোগে এসে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে। দেলোয়ার কুমিল্ল¬া দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনার পরদিন নিহতের বড় ভাই মো.শাহাদাত হোসেন নয়ন বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওই গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রেজাউল করিম ও আবুল কালামের ছেলে কাউছারসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লার সদস্যরা।
অনুসন্ধান ও কুমিল্ল¬া আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর পিবিআইয়ের সদস্যরা এ মামলায় সদর দক্ষিণ থানার নোয়াগ্রাম গ্রামের সফিকুর রহমান রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে। আনোয়ার মামলার প্রধান আসামি রেজাউলের বিশ্বস্ত সহযোগী বলে জানা গেছে। ওইদিন পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে সে দেলোয়ার হত্যাকা-ের পুরো ঘটনা স্বীকার করে। এরপর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আনোয়ার। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আনোয়ার জানায়, দেলোয়ারকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার। এছাড়া মামলার আসামি রেজাউল, চাষাপাড়া গ্রামের মীরন খন্দকারসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে।
সূত্র জানায়,এক সময় সাত্তার দেলোয়ারের কর্মী ছিলো। দেলোয়ার ২০১৭ সালের সিটি নির্বাচনে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন আবদুস সাত্তার। যদিও নির্বাচনের আগে সাত্তারকে দলীয় প্রার্থী করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন দেলোয়ার। পরে সে নিজেই দলীয় প্রার্থী হওয়ায় তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এছাড়া চৌয়ারা বাজার ও গরু বাজারের নিয়ন্ত্রণ ছিলো দেলোয়ারের হাতে। সাত্তার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসানসহ ওই বাজার দখল নিতে শুরু করেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। পরিবারের দাবি, এসব ঘটনার জের ধরে তারাই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে দেলোয়ারকে।
দেলোয়ার হত্যা মামলার বাদী মো.শাহাদাত হোসেন নয়ন বলেন, কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার দেলোয়ারকে হত্যা করেছে। চৌয়ারা বাজার কেন্দ্রিক যতগুলো হত্যার ঘটনা ঘটেছে, এর সবগুলোই হয়েছে কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার ও ২৭নং ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর আবুল হাসানের পরিকল্পনায়। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য এগুলো করছে। আমরা তাদের ফাঁসি চাই। আবুল হাসান গোলাম জিলানী হত্যা মামলার ১নং আসামি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মো.মতিউর রহমান বলেন, আমরা দেলোয়ার হত্যার ঘটনায় আনোয়ার নামে একজনকে গ্রেফতার করেছি। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার জবানবন্দির আলোকে আমরা হত্যাকা-ে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি হত্যায় ব্যবহৃত পিস্তল ও মোটরসাইকেল উদ্ধারের চেষ্টা করছি। তদন্ত শেষে এ ঘটনার বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার ও আবুল হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি। জিলানী হত্যাকা-ের পর থেকেই তারা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। তাদের বাড়িতে তালা লাগানো রয়েছে।